মনে আছে ছোট্ট মুর্তজা আহমাদির কথা! ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ বছর বয়সী এই বালক বিশ্ব মিডিয়ার নজর কেড়েছিল একটি ছবির মাধ্যমে, যেখানে তার গায়ে প্লাস্টিকের জার্সি। আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের আদলে তৈরি করা ওই জার্সির পেছনে লেখা ছিল ‘মেসি ১০’। তার ভাইয়ের তোলা ওই ছবি হয়েছিল ভাইরাল। আফগানিস্তানের এই ছোট্ট ভক্তের কথা জানতে পেরে তার সঙ্গে দেখাও করেন লিওনেল মেসি। তারপর থেকে বদলে গেছে মুর্তজার জীবন, মুখোমুখি হতে হয়েছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার।
ওই ছবি ভাইরাল হওয়ার প্রায় এক বছর পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে মেসির সঙ্গে দারুণ এক সময় কাটায় মুর্তজা, যখন তার বয়স ৬ বছর। কাতারের দোহায় আল আহলের বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে তাকে কোলে তুলে নেন বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড। ম্যাচ শুরুর আগে মেসির সঙ্গে ছবিও তোলে ‘প্লাস্টিক জার্সি’ বালক। কিন্তু সে দেশে ফেরার পর তার পরিবারের জন্য দুঃস্বপ্নের জীবন শুরু হয়। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এমন গল্প শুনিয়েছে ব্লিচার রিপোর্ট।
প্রাণনাশের হুমকি, অপহরণের আশঙ্কায় শেষ পর্যন্ত নিজের শহর গজনি ও পরিবার ছেড়ে চলে যায় মুর্তজা। তার বড় ভাই হুমায়ুন জানালো, মেসিভক্তিতে কী সর্বনাশ তার ডেকে এনেছিলেন। মুর্তজার সহোদর বলে, ‘আমি গুঞ্জন শুনলাম যে মেসি মুর্তজার সঙ্গে দেখা করতে চান।’ বাবা আরিফ এরপর শুরু করলেন, ‘দ্রুত মেসির কাছের লোকদের কাছ থেকে দুটি বাক্স এলো আমাদের বাড়িতে। যখন বক্সগুলোর দিকে তাকালাম, ভেবেছিলাম হয়তো মুর্তজার জন্য একটায় খেলনা আরেকটিতে কিছু ডলার থাকবে। কিন্তু না, একটা বল আর একটায় জার্সি।’
ওই উপহার বাক্সটি আসার পর থেকে সমস্যার শুরু। আশপাশের লোকরা মনে করলো আহমাদি পরিবারের কাছে অনেক ডলার এসেছে। তখন থেকে সন্দেহের চোখে তাকাতে থাকলো অনেকে। তালিবানের কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছিল তাদের কাছে। পুরো পরিবারকে অপহরণের হুমকি দিয়েছিল তারা। ওই চিঠি পেয়ে নিরাপদ কোথাও আশ্রয়ের আবেদন করেছিল আহমাদি পরিবার, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করা হয়।
আরিফ বললেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম যে দোহায় গিয়ে মেসির সঙ্গে দেখার পর তিনি কিছু করবেন। আমরা দোহায় গিয়েছিলাম যেন মেসি তার জন্য কিছু একটা করেন। কিন্তু মুর্তজার জন্য তিনি কিছুই করলেন না।’ কাতার থেকে ফেরার পর মুর্তজার জীবন কষ্টকর হয়ে ওঠে। অনেকে মনে করেছিল মেসি তাকে অনেক অর্থকড়ি দিয়েছেন। তারপর থেকে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ, ঘরের বাইরেও যেতে পারেনি। এমনকি বন্ধ করতে হয়েছিল ফুটবল খেলাও।
সন্তানকে হারানোর ভয়ে শেষ পর্যন্ত চাচার সঙ্গে রাজধানী কাবুলে পাঠানো হয় মুর্তজাকে। যদিও তখন আফগান রাজধানীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ছিল প্রাত্যহিক ব্যাপার। কিন্তু এত কিছুর পরও মেসির জার্সি গায়ে দেওয়ায় অনুতপ্ত নয় ১০ বছর বয়সী মুর্তজা। বরং এখনও ভালোবাসে প্রিয় মেসিকে, ‘ওখানে (কাবুল) প্রত্যেক জায়গায় অনেক বিস্ফোরণ হতো, বুম। খেলার কোনও জায়গা ছিল না, বন্ধু ছিল না। কিন্তু আমি আবারও জার্সি পরবো, কারণ আমি মেসিকে ভালোবাসি।’
কয়েক মাস আগে আবার নিজের শহর গজনিতে ফিরেছে মুর্তজা, থাকছে পরিবারের সঙ্গেই।
খুলনা গেজেট/কেএম