দীর্ঘ বিশ দিনের অপেক্ষা শেষ হলো আজ। পিএসজির জার্সি গায়ে দেখা মিলেছে লিওনেল মেসির। মহাতারকাকে নিজেদের করে নেওয়ার দিনটা দারুণভাবেই রাঙিয়েছে ফরাসি পরাশক্তিরা। কিলিয়ান এমবাপের জোড়া গোলে রেঁসকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে দিয়েছে ২-০ ব্যবধানে।
ফরাসি মুল্লুকে মেসির পা পড়েছিল সেই ১০ আগস্ট। সেদিন দলে টানার খবরটা প্রকাশ করে পিএসজি। এরপরের দিন মহাসমারোহে তাকে দলের একজন হিসেবে পরিচিত করার পর্বটাও সেরে ফেলে প্যারিসিয়ানরা। সেই থেকে তার পিএসজি অভিষেকের অপেক্ষার শুরু।
মৌসুম শেষের বিরতির পর ম্যাচফিট হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে নামতে হলে পেরোতে হয় প্রাক মৌসুম প্রস্তুতির দীর্ঘ এক প্রক্রিয়া। সেখানে আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জেতার পর থেকে মাঠেই নামেননি মেসি। ফলে পিএসজিতে নাম লেখানোর পরই মাঠে নামার উপায় ছিল না আর্জেন্টাইন অধিনায়কের।
দলের কোচ মরিসিও পচেত্তিনোরও খুব একটা তাড়া ছিল না, বলেই দিয়েছিলেন, ম্যাচ ফিট হলে তবেই সাবেক বার্সা তারকাকে নামাবেন মাঠে। মাঝে গেল সপ্তাহে গুঞ্জন উঠেছিল, মেসির অভিষেক হলো বলে। কিন্তু শেষমেশ হয়নি, ফলে অপেক্ষার পর্ব শেষই হচ্ছিল না।
এবার কোনো গুঞ্জন নয়, মেসিকে যে ম্যাচে দেখা যাবে, তা একরকম নিশ্চিতই ছিল। তবে একাদশে জায়গা হবে কিনা, তা নিয়ে ছিল প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের জবাবও মিলল ম্যাচের ঘণ্টাখানেক আগে। একাদশে নয়, মেসি ম্যাচটা শুরু করলেন বেঞ্চে থেকে। আক্রমণভাগে ফেরেন নেইমার, মৌসুমে প্রথমবারের মতো।
মেসিকে বেঞ্চে রেখেই কিলিয়ান এমবাপে দেখালেন নিজের জাদু। ম্যাচের ১৫ মিনিটে এগিয়ে দিলেন দলকে। মেসি না থাকলে কী হবে, যোগানটা এল এক আর্জেন্টাইনের পা থেকেই। আনহেল ডি মারিয়ার ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হেড থেকে গোল করেন ফরাসি তারকা।
বিরতির আগে আর খুব একটা আক্রমণে উঠতে পারেনি পিএসজি। বিরতির পর নিজেদের জালে জড়িয়ে যেতে দেখল বল। তবে ভাগ্য ভালো, অফসাইডের খড়গে গোলটা পায়নি স্বাগতিক রেঁস।
না হওয়া সে গোলে যেটুকু আশা জেগেছিল স্বাগতিক শিবিরে, সেটাও উড়িয়ে দিতে সময় নেননি এমবাপে। ৬৩ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে আশরাফ হাকিমির ক্রসে পা ছুঁইয়ে ফরাসি তারকা করেন ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোলটি। ম্যাচের সব অনিশ্চয়তা শেষ হয়ে যায় সেখানেই, তবে আকর্ষণটা নয়। ফলাফল ছাপিয়ে এ রাতে ম্যাচের সব আকর্ষণ যে ছিল মেসিতে।
৬৫ মিনিটে মেসি মাঠে এলেন নেইমারের বদলে। তাতে মেসি, নেইমার, এমবাপেকে একসঙ্গে মাঠে দেখার আক্ষেপটা শেষ না হলেও মেসিকে পিএসজির জার্সিতে দেখার অপেক্ষা শেষ হয় অবশেষে।
তবে এর মিনিট ছয়েক আগে যখন তিনি বেঞ্চ থেকে সাইডলাইনে যাচ্ছিলেন ওয়ার্ম আপ করতে, তখন স্তাদ অগাস্ত দেলঁ দেখল অভূতপূর্ব এক দৃশ্য। সাধারণত কোনো দলের তারকা গা গরম করতে নামলে বিপুল হর্ষধ্বনির মাধ্যমে বরণ করে নেন দর্শকরা।
প্রতিপক্ষের মাঠ হওয়ায় এদিন পিএসজির সমর্থকরা ছিলেন সংখ্যালঘু। তবু মেসিকে বরণ করে নিতে কণ্ঠের অভাব পড়ল না। প্রতিপক্ষ সমর্থকরাও বিপুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মাধ্যমে বরণ করে নেন তাকে!
মাঠে এসে বলে প্রথম ছোঁয়াটা দিতেও সময় নিলেন না, খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না প্রথম ফাউলের জন্যও। তবে গোলের অপেক্ষাটা শেষ হলো না। খুব বেশি তাড়া নেই, তাই বলেই হয়তো, বক্সে তেমন গেলেনই না। কে জানে হয়তো সেটা তুলে রেখেছেন ঘরের মাঠে অভিষেকের জন্য!
তবে মেসির গোল না হলেও, পিএসজি জিতল। ২-০ গোলে রেঁসকে হারিয়ে টানা চতুর্থ জয় পায় দলটি। ফরাসি লিগ মৌসুমের প্রথম ক্লিন শিটের স্বাদটা ছিল উপরি পাওনা। এই জয়ের ফলে পচেত্তিনোর দল উঠে এল লিগের শীর্ষেও। তারকা খচিত দল নিয়ে যে মৌসুম শেষেও এই অবস্থানই দেখতে চাইবে ফ্রান্সের সফলতম দলটি, তা বলাই বাহুল্য।
খুলনা গেজেট/কেএম