ছাতাইয়ের বুড়ো শিবের মেলা এবারও জনশূন্য। প্রাচীন এই মেলা প্রতি বছর বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন বসে। গতবার করোনা আবহের জন্য প্রশাসনের অধ্যাদেশ অনুযায়ী লকডাউন ঘোষিত হয়। এবারও একই কারণে প্রশাসন থেকে মেলা না বসার নির্দেশ এসেছে। এই জন্য মেলায় দর্শনার্থী আসেনি। মতি ডোম ও তার কয়েক জন সদস্য ছাড়া।
লকডাউনের কথা তারা না জেনে প্রভাতের নবীন সূর্যকে বন্দনা করে মেলার পথে হাঁটতে শুরু করে। দুপুরে পৌঁছেও গেল। কিন্তু এসে দেখে জনশূন্য মেলা। বেলা অনেকটাই এগিয়েছে। সূর্যটা পশ্চিমে ক্রমশ হেলে পড়ছে। নির্জন মেলা দেখে মতি হাঁপানি রোগীর মতো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে লাগলো। মতির ছলছল চোখ আর বৈশাখের কাঠফাটা রোদের ফুসফুস শব্দে চার দিক একাকার। সে ধুপ করে মাটিতে বসে বিড়ি ধরার জন্য দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাল।
এদিকে মতি পেটের জ্বালায় ধীরে ধীরে পুড়ে। দেখেশুনে তার বৌ ফুলমণি কোন দিক থেকে তিনটি ইট জোগাড় করে। এবং ইট তিনটি দিয়ে আখা বানাই। দুটো সেদ্ধ পোড়া ভাত ফোটাবে বলে। কিন্তু সাধে বাধ সাধল কাল বৈশাখী ঝড়। শো শো গর্জনে ঝড় বইছে। আখায় বসানো ভাতের হাঁড়ি পাতিল এবং তাঁবু উড়ে গেল। তাঁবু কত দূর গেল কে-ইবা জানে। ঝড় থামে না। চোখে কিছু দেখা যায় না। বৃষ্টির জল তাদের মাথায় বর্ষাচ্ছে। বিত্তির চাচ গুলো ভিজে গেল এবং কতকটা কোন দিকে উড়ে যায়। কিসে কুলো বুনাবে। বৃষ্টি থামল ধীরে ধীরে। ভাতের হাঁড়ি থেকে চটা, রাতে শোবার কাঁথা-ধোকড়া সবই ভাসছে জলের বুকে।
বংশ পরম্পরায় এরা এই মেলায় আসে। বিক্রি বাটা ভালোই হয়। মেলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থাকে। এবার কপাল দুঃখে ভাসল। মতিরা কাজ করে, খাটে, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই রোজগার করে। সৎ পথে। তারা সারাদিনের পরিশ্রান্ত দেহটাকে সঁপে দেয় মলিন বিছানার কোলে। এরা কারো মতো না।
খুলনা গেজেট/ এস আই