ক্রমাগত ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে বাজারের লাগাম টেনে ধরতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয়।
এর মধ্যে একটি ডিম ১২ টাকা আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে এসব পণ্য মিলছে না। এতে করে জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার অযাচিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাদের বেঁধে দেওয়া মূল্যে ভোগ্যপণ্য কেনাই যাচ্ছে না। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনে কমে বিক্রি করা সম্ভব না।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মহানগরী খুলনার নিউ মার্কেট, সান্ধ্য বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর, বড় বাজারসহ আশাপাশের দোকানে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হলেও প্রতিবছর সংরক্ষণের অভাবে ২০ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যাবসায়ীরা মসলাজাত এ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। তারই অংশ হিসেবে নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে ৪৮ টাকার ডিমের হালি পাইকারিতে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মহল্লার দোকানগুলোতে ৫ টাকা বাড়তিতে প্রতি হালি ডিম ৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
খুলনা বাজারেরর পেঁয়াজ বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৪-৭৮ টাকা দরে কিনেছি। খরচসহ প্রতি কেজির কেনা মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা। ব্যবসা করতে এসে ৮০-৮২ টাকা চালান খাটিয়ে ৮৫-৯০ টাকার কমে পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব না।
জানতে চাইলে নিউ মার্কেটের ডিম বিক্রেতা আব্দুল্লাহ বলেন, আড়ত থেকে ১০০ পিছ ডিম কিনতে হয়েছে এক হাজার ১৫৫ টাকায়। সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রায় ১২শ টাকা পড়ে যায় প্রতি ১০০ ডিমে। তাহলে বেশি দরে ডিম কিনে কীভাবে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করব?
ডিম-পেঁয়াজের মতো আলুর বাজারেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়। পাইকারিতে আলুর কেজি ৪৫ টাকা ও খুচরা বাজারে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে আলুর কেজিতে ৯-১২ টাকা বেশি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে এক আলু ব্যবসায়ী জানান, কম দামে কিনতে না পারলে তো বেশি দামে বিক্রি করবই। কোল্ড স্টোরেজ থেকে নতুন আলু বাজারে আসেনি। তাই দাম বেশি দিয়ে আগের আলু কিনতে হচ্ছে। সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা দেখছি না।
জানা যায়, সরকার নির্ধারিত নতুন দর কার্যকর নিয়ে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেশের জেলা শহরগুলোতে অভিযান কার্যক্রম শুরু করেছে। এর পরেও ডিম, আলু ও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসার বিষয় ভোক্তার মহাপরিচালক, এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত কোল্ড স্টোরেজ গুলো পর্যবেক্ষণ করছি। যে সকল কোল্ড স্টোরেজগুলোতে থেকে প্রতি কেজি আলু ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্য বাস্তবায়ন হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
খুলনা গেজেটে/কেডি