খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ
  সিইসিসহ নতুন নির্বাচন কমিশনারদের শপথ আজ
  অ্যান্টিগা টেস্ট: ৪৫০ রানে ইনিংস ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৪০/২

মূর্খতা বনাম সালামের সভ্যতা

মুফতি সাআদ আহমাদ

সালাম ইসলামের সে সকল বিষয়ের অন্যতম যা বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান। যে দৃশ্য তার দ্রষ্টাকে প্রভাবান্বিত করে। সালামের অভূতপূর্ব সম্ভাষণ রীতি মূহুর্তেই দর্শক মনে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কেননা সালামের সাথে আছে ইসলামী সভ্যতার বিরাট অধ্যায়। যা মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আমাদের শিখিয়েছেন।

ধরুন অফিসের খুব তাড়া। কোন মতে নাকে মুখে দুটো পুরে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়লেন। রিকসা চেপে গলির মোড় পর্যন্ত যেতেই পিছন থেকে অপর একটি রিক্সার ধাক্কা। ঘাড় মুড়ে পিছনে ফেরার আগেই এমন কিছু কথা কানে ভেসে আসলো যার জন্য আপনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। হতে পারে তা কোন অভদ্র ব্যক্তির অযাচিত আচরণ বা কোন অসভ্য লোকের মূর্খতাপূর্ণ কথা। আপনার তখন কি করা উচিত?

মূর্খের সাথে মূর্খতা করা! এক গালাগালের জবাবে আরো ১০ টা শুনিয়ে দেওয়া!

না, মুমিন কখন এরূপ করতে পারে না। এক্ষেত্রে মুমিনের প্রতিবাদের ভাষা হবে ভিন্ন রকম। সালাম অর্থাৎ আস্ সালামু আলাইকুম। হ্যাঁ, সালামই পারে এরূপ পরিস্থিতি সহজেই স্বাভাবিক করে তুলতে। আপনাকে স্বসম্মানে সেখান থেকে বের করে আনতে পারে এই ছোট কাজটি। দেখবেন এটাই হবে ওই মূহুর্তের সেরা স্মার্ট রোল। পাঁচটি বেশী কথা বলেও আপনি লোকটিকে যে শিক্ষা না দিতে পারতেন। সালাম তা থেকে উত্তম কিছু শিখিয়ে দিবে তাকে । হয়তো একাকি সময় সে বিষয়টি নিয়ে ভাববে। হতে পারে এটাই হবে তার পরিবর্তনের সূচনা।

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঠিক এমনটি শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন তার প্রিয় হাবীব সা. কে। মক্কার কাফেরদের উদ্ধতপূর্ণ আচরণে যখন প্রিয় নবীজি অতিষ্ঠ প্রায়। এমনকি মহান আল্লাহর কাছে বলেই ফেললেন “এ জাতি আর ঈমান আনবে না হে প্রভু” (যুখরুফ-৮৮)। সুতরাং…

প্রিয় নবীজির এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহর নির্দেশনা ছিল অত্যন্ত শিক্ষণীয়। মহান আল্লাহ নবীজি সা. কে প্রতিশোধের নতুন কৌশল শিখিয়ে দিলেন। বললেন, প্রিয় নবী হে, “আপনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং তাদের সালাম দিন” (যুখরুফ-৮৯) অর্থাৎ কেমন যেন আপনি শুনেও শোনেন নি। দেখেও দেখেন নি। আর হ্যাঁ, এক্ষেত্রে আপনার বড় অবলম্বন হবে সালাম। সালাম আপনার জন্য এজাতীয় বিব্রতকর পরিস্থিতির উত্তম নিরাময়ক।

পবিত্র কুরআনে বিষয়টির একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কট্টর মূর্তিপুজারি পিতার সাথে এক মহান নবীর কথোপকথন। তিনি হলেন আমাদের মুসলিম উম্মাহের পিতা ইবরাহীম আ.। তার সাথে পিতা আজরের কথাবার্তার এক পর্যায়ে আজর বলে উঠল, হে ইবরাহীম! আমি তোমাকে প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা করবো। কিন্তু কেন?

কারণ ইবরাহিম আ. ছিলেন একত্ববাদে বিশ্বাসী। মহান আল্লাহ ব্যতিত দ্বিতীয় কোন প্রভু মানতে তিনি প্রস্তুত নন। আরো বিষয় হলো, তিনি স্বীয় পিতাকে মূর্তির উপাসনা থেকে বিমূখ করতে চেয়েছিলেন। তাদের হীনতা ও তুচ্ছতা যৌক্তিকভাবে তুলে ধরেছিলেন। এই ছিল তার অপরাধ।

অথচ তিনি পিতার পূর্ণ মর্যাদার দিকে লক্ষ রেখে তাকে বলেছিলেন, (হে আমার সম্মানিত পিতা, আপনি কেন এমন বস্তুর উপাসনা করেন যা শুনেও না দেখেও না এবং আপনার কোন কাজেও আসে না। ওহে বাবাজ্বী আমার, যে বিষয়ে আপনাকে জ্ঞান দেওয়া হয়নি অথচ আমাকে তা দেওয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে আপনি আমার অনুসরণ করুন। আমি আপনাকে সঠিক পথ দেখাব। প্রিয় আব্বু আমার, আপনি শয়তানের অনুগত হবেন না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময় প্রভুর অবাধ্য। আমি তো আপনার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছি। হে প্রিয় পিতাজী আমার, যে দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার উপর কোন আজাব এসে যাবে আর তখন আপনি শয়তানের বন্ধুতে পরিণত হবেন” (সুরা মারিয়াম-৪২-৪৫)

কিন্তু পিতার হত্যার হুমকিতে ইবরাহীম আ. ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার বিষয়টি তিনি হেসে উড়িয়ে দিলেন। ভাবটা যেন কথাটি তিনি কানেই তোলেননি। প্রসঙ্গ বদলে পিতার দিকে তাকিয়ে কেবল বললেন “সালামুন আলাইকা” (সুরা মারিয়াম-৪৭)

পিতার জীবনে সন্তানের জন্য উত্তম শিক্ষা থাকে। পিতা ইবরাহীম আ. জীবন থেকে আমাদের জন্য এটা একটি বড় শিক্ষণীয় প্রাপ্তি। সুতরাং প্রকৃত মুমিনের চিত্র এমনিই হওয়া উচিত। মূর্খতার জবাব মূর্খতা দিয়ে নয়। মুর্খতার জবাব হবে সভ্যতা দিয়ে। আর তা শুরু হতে পারে সালামের সভ্যতা থেকে।

শত্রুকে সালাম দিন। শত্রুতা দিনে দিনে বন্ধুতে বদলে যাবে। আপনাকে নিয়ে যে হিংসা করে বা আপনাকে প্রতিপক্ষ মনে করে। হতে পারে ক্লাসের সহপাঠি বা কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী। সাক্ষাতে উচ্চুস্বরে তাকে সালাম দিতে ভুলবেন না। ছোট এই কাজটি তার উপর আপনার দারুন প্রভাব সৃষ্টি করবে। হয়তো সে দমে যাবে নতুবা বদলে যাবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এটাকে স্মার্ট মুমিনদের অভ্যাস রূপে উল্লেখ করেছেন। “মুমিন ব্যক্তিকে যখন কোন মূর্খ লোকেরা অযাচিতভাবে সম্বোধন করে সে বলে সালাম” (সুরা ফুরকান-২৩)

(লেখক : শিক্ষক , ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া, ফুলবাড়িগেট, খুলনা)

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!