খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

মুস্তাফিজ ম্যাজিকে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে তৃতীয় ওয়ানডে জয়ে সিরিজ টাইগারদের। শুরু থেকে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা আগ্রাসী থাকলেও মুস্তাফিজ-হাসান মাহমুদের বোলিং তোপে শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছে টাইগাররাই। সবশেষ দলের হয়ে চার উইকেট সংগ্রহ করেছেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। আর শেষ মুহুর্তে হাসান মাহমুদের ২ উইকেট দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেন। ৫ রানে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

অবশ্য আয়ারল্যান্ডের ভিত নাড়িয়ে দেয় নাজমুল হাসান শান্ত। বোলিংয়ে অনিয়মিত নাজমুল হোসেন শান্তকে এনে যেন বাজি ধরেছিলেন তামিম ইকবাল। আগের ম্যাচের বিধ্বংসী ব্যাটার হ্যারি টেক্টরকে শান্ত অফ-স্পিনে বাউন্ডারিতে ধরাশায়ী করেছেন। লিটন দাসের তালুবন্দি হওয়ার আগে টেক্টরের সংগ্রহ ৪৫ রান। এরপর দ্রুত উইকেট হারিয়ে ক্রমাগত হারের পথে এগিয়ে যায় আইরিশরা।

তবে আইরিশ ইনিংসের ৩৭তম ওভারটাই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিতে পারত। অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর করা ওই ওভারে আইরিশরা পায় ২১ রান। অথচ এর আগে স্বাগতিকদের ৭৪ বলে ১০১ দরকার ছিল। সেই ধাক্কা সামলে ব্রেক-থ্রু চাওয়া ছিল টাইগারদের। শান্ত এসে সেটাই নিশ্চিত করেছেন। এরপর মুস্তাফিজ ও হাসানের বোলিং তোপ আইরিশদের কফিনে শেষ পেরেকের কাজ করেছে।

তবে তখনও নাটকীয়তার কিছুটা বাকি। ক্রিজে থাকা মার্ক অ্যাডায়ার ও অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন টাইগারদের জয় ছিনিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তার ওপর বাড়তি পাওনা হিসেবে আসে বাউন্ডারিতে মেহেদী হাসান মিরাজের হাত ফসকানো ক্যাচ। এরপর হাসান মাহমুদ যখন শেষ ওভার করতে আসেন, তখন জয় থেকে মাত্র ১০ রান দূরে আয়ারল্যান্ড। তবে এবার আর স্বপ্নভঙ্গ নয়, সময়ের দাবি পূরণ করেছেন তরুণ এই পেসার। দুর্দান্ত স্লোয়ারে ওভারের প্রথম বলেই হুমকি হয়ে ওঠা অ্যাডায়ারকে বোল্ড করেন তিনি। এরপর তৃতীয় বলে অলরাউন্ডার ম্যাকব্রাইনকে ফাঁদে ফেলে স্লিপারের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। সব মিলিয়ে ম্যাচের শেষ ওভারে কেবল ৪ রান তুলতে পারে আইরিশরা। আর এতেই ৫ রানের জয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে টাইগাররা।

এর আগে বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দেখে-শুনে শুরু করেন দুই আইরিশ ওপেনার স্টার্লিং ও স্টিফেন ডোহেনি। তবে বাংলাদেশি পেসারদের তোপের মুখে খুব বেশি দূর এগোয়নি এই জুটি। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আইরিশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। ওভারের দ্বিতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে লেন্থ ডেলিভারিতে করেন এই বাঁহাতি পেসার। সেখানে কাট করতে গিয়ে লিটনের হাতে ধরা পড়েন ডোহেনি। সাজঘরে ফেরার আগে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে ৪ রান।

ডোহেনিকে দ্রুত ফেরালেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশি বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকেন আইরিশ ব্যাটাররা। শুরুতে ধীরগতির ব্যাটিং করলেও উইকেটে থিতু হওয়ার পর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন স্টার্লিং। তিনে নামা অ্যান্ডি বালবার্নিকে সঙ্গে নিয়ে শক্ত ভীত গড়েন এই ওপেনার। তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ২১ ওভারে শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করে আইরিশরা। এর মধ্যেই ৫৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টার্লিং। এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন বালবির্নিও। ফিফটি করতে অধিনায়কের প্রয়োজন হয়েছে ৭১ বল।

হাফ সেঞ্চুরির পর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বালবার্নি। ২৭তম ওভারের প্রথম বলটি শর্ট লেন্থে রেখেছিলেন এবাদত, সেখানে ঘুরে দাঁড়িয়ে পুল করেন আইরিশ অধিনায়ক। টাইমিং না হওয়ায় শুধুই উচ্চতা পেয়েছে বল, কিন্তু বেশি দূরত্ব পায়নি। তাতে রনি তালুকদারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৭৮ বলে ৫৩ রান। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের উইকেট এমন মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট ছিল টাইগারদের উদযাপনে। বিশেষ করে, এই উইকেটটি ট্রেডমার্ক ‘স্যালুট’ দিয়ে উদযাপন করেন এবাদত।

অধিনায়কের পর বাংলাদেশের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান স্টার্লিং। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া এই অভিজ্ঞ ওপেনারকে সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ। ৩২তম ওভারের প্রথম বলে এই স্পিনারের বাড়তি বাউন্সে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি স্টার্লিং। তাতে আউটসাইড এইডজে বল চলে যায় মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে। ৭৩ বলে ৬০ রান করা স্টার্লিং সাজঘরে ফেরায় ভালোভাবেই ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ।

এরপর অবশ্য আতঙ্ক ছড়িয়েছেন দুই আইরিশ ব্যাটার টেক্টর ও লরকান টাকার। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টেক্টর ৪৮ বলে ৪৫ এবং টাকার করেন ৫৩ বলে ৫০ রান। এছাড়া টাইগারদের ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পাওয়া অ্যাডায়ার শেষদিকে করেন ১০ বলে ২০ রান।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পান মুস্তাফিজ। এছাড়া হাসান দুটিটি এবং একটি করে উইকেট নিয়েছেন মিরাজ, এবাদত ও শান্ত।

এদিন ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই খেলতে নামে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। মূলত সাকিবের চোটে কপাল খুলেছিল রনি তালুকদারের। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ এই ওপেনার। ওয়ানডে অভিষেকে নিজের খেলা প্রথম ১২ বলে কোনো রান তুলতে পারেননি তিনি। তবে ১৩তম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ওয়ানডেতে রানের খাতা খোলেন তিনি। কিন্তু পরের বলেই ফিরতে হয়েছে সাজঘরে।

চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেন্থে করেছিলেন মার্ক অ্যাডায়ার। সেখানে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। তাতে ৪ রানে থামেন অভিষিক্ত এই ওপেনার।

আইরিশদের পেসের সামনে রনি ব্যর্থ হলেও তিনে নেমে কাউন্টার অ্যাটাকে সফলতা পান শান্ত। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লেতে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬২ রান তোলে বাংলাদেশ। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলটি অফ স্টাম্প থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় শান্তর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় প্রথম স্লিপে। কোনো ভুল করেননি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বার্লবার্নি। তাতে ৭ চারে ৩২ বলে ৩৫ রানে থামতে হয় শান্তকে।

৬৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর দলকে কক্ষপথে রাখেন লিটন দাস ও তামিম ইকবাল। তাদের ব্যাটে বড় সংগ্রহের পথেই হাঁটছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৩৫ রান করে লিটন বিদায় নিলে ভাঙে ৭০ রানের তৃতীয় উইকেটের জুটি। ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলটি পঞ্চম স্টাম্প বরাবর খানিকটা শট লেন্থে করেছিলেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। সেখানে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে অফ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন লিটন, কিন্তু ঠিকমতো টাইমিং না হওয়ায় মিড অফে ধরা পড়েন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

এদিন ব্যর্থ আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে প্রশংসা কুড়ানো তাওহীদ হৃদয়। ২৮তম ওভারের শেষ বলে জজ ডকরেলকে ব্যকফুটে কাট করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। তাতে বল আঘাত হানে তার উইকেটে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ১৩ রান।

হৃদয় ফেরার পর মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন তামিম। তবে আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে উল্টো বিপদ ডেকে আনেন তিনি। ৩৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ডকরেলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে এডজ হয়ে বল উপরে উঠে যায়, তাতে ৮২ বলে ৬৯ রান করে থামেন তামিম।

১৮৬ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৭৫ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। এদিন হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে থাকা এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। ৪৫ রান করা মুশফিক লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লে ভাঙে সেই জুটি। এরপর বেশিক্ষণ আর টিকতে পারেননি না মিরাজও। ৪৭তম ওভারের তৃতীয় বলে অ্যাডায়ারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাম্পারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৩৯ বলে ৩৭ রান করেছেন এই ডানহাতি।

মিরাজ যখন ড্রেসিংরুমের পথে হাঁটছেন তখন অলআউটের শঙ্কায় বাংলাদেশ। সেই শঙ্কার মেঘ আরও ঘনীভূত হয়েছে পরের ওভারেই। ৪৮তম ওভারের তৃতীয় বলে রান আউটে কাটা পড়েন হাসান মাহমুদ।

তার বিদায়ের ঠিক ৩ বল পর গোল্ডেন ডাক খেয়ে ফেরেন মুস্তাফিজ। ইনিংস শেষ করে আসতে পারেননি অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয়ও। তাতে ২৭৪ রান তুলে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!