ভুয়া মুফতি ও হাফেজ পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে অর্থ প্রতারণা চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সংস্থাটি বলছে, গ্রেপ্তাররা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদের মুফতি ও হাফেজ টাইটেল ব্যবহার করে ইমাম পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের কাছে ফোন দিতেন। এরপর কখনও মসজিদের মুয়াজ্জিন বা স্ত্রী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে বলে প্রচার করেন। হাসপাতালের বড় অংকের চিকিৎসা খরচ দিয়ে দাফন-কাফনের নামে অর্থ সাহায্য-সহযোগিতা চাইতেন তিনি। এভাবে গত দুই বছর ধরে প্রতিদিন চক্রটি জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছিল।
মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রো সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে সিআইডিতে অভিযোগ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি অনুসন্ধান করে সংঘবদ্ধ চক্রটিকে শনাক্ত করে এবং চক্রের মূলহোতা মো. আব্দুল মান্নান শেখসহ চক্রের পাঁচ সদস্যকে মিরপুর পল্লবী থানা ও তুরাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন আব্দুল মান্নান শেখ (৪২), কামরুল ওরফে কামরুজ্জামান (৩৪), আসাদুল্লাহ আল গালিব (২৬), আমিনুর রহমান (৩৯) ও শওকত আলী খান সাগর (৪৩)।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে বিভিন্ন ক্লাব ও অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারদের নাম-ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্যসহ মোবাইল নম্বর সম্বলিত ডিরেক্টরি উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, ঢাকা গলফ ক্লাব, চিটাগাং বোট ক্লাব, বারিধারা কসমোপলিটন ক্লাব, মহাখালী ডিওএইচএস কাউন্সিল, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারদের ডিরেক্টরিসহ মোট ৩৫টি ডিরেক্টরি জব্দ করা হয়।
মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার চার জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চক্রের অন্যতম হোতা শওকতকে তুরাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে থেকেও বিভিন্ন ক্লাব ও অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারদের নাম-ঠিকানা ও ব্যক্তিগত তথ্যসহ মোবাইল নম্বর সম্বলিত ১৫টি ডিরেক্টরি উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়ে নামের সঙ্গে মুফতি ও হাফেজ টাইটেল ব্যবহার করে বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের কাছে ফোন দিয়ে বিভিন্ন গল্প সাজিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।
যেমন তারা কখনও মসজিদের মুয়াজ্জিন বা তার স্ত্রী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। কিন্তু হাসপাতালের বড় অংকের চিকিৎসা খরচ বাকি। সে টাকা দিতে না পারায় হাসপাতাল থেকে লাশ বের করে দাফন-কাফন করা যাচ্ছে না। এজন্য তারা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সাহায্য সহযোগিতা চায়।
চক্রের সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তির নাম-ঠিকানা ও পদবি জেনে নিকটস্থ বড় মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়ে ফোন দেয়। এভাবে চক্রটি জনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছিল।
গ্রেপ্তারদের মোবাইলের বিকাশ নম্বরের স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি মাসে প্রত্যেকে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা এভাবে হাতিয়ে নিতো। ডিরেক্টরিতে কে টাকা দিয়েছে, কে কখন দেবে, কে কেমন ব্যবহার করেছে ইত্যাদি কমেন্ট লিখে রাখত। আসামিরা করোনাকালে দুই বছরের অধিক সময় ধরে এ প্রতারণা করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) পল্লবী থানায় মামলা হয়েছে। মামলা নং-২৯।