বাবা-মায়ের পাপের ফলেই জন্ম নিচ্ছে প্রতিবন্ধী শিশু। অসুস্থ, আপত্তিকর এবং অগ্রহণযোগ্য এই চিন্তার ওপর ভর করেই তৈরি হয়েছে ‘ঘটনা সত্য’।
প্রতিবাদের মুখে ভুল স্বীকার করে ঈদের নাটকটি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়েছেন নির্মাতা, শিল্পী ও প্রযোজক। বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও পরিচালক মামুনুর রশীদের মতে, ‘ঘটনা সত্য’র মতো অমার্জনীয় অপরাধের পেছনে রয়েছে মুনাফালিপ্সা ও তাড়াহুড়ো।
ঘটনা সত্য। সিএমভির প্রযোজনায় মঈনুল সানুর চিত্রনাট্যে নাটকটির নির্মাতা রুবেল হাসান। নাটকে গৃহপরিচারিকার চরিত্রে মেহজাবীন চৌধুরী ও গাড়ি চালকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো। বিয়ের পর তাদের সংসারে জন্ম নেয় প্রতিবন্ধী শিশু। এই সন্তান জন্মের কারণ হিসেবে বাবা-মায়ের অতীত পাপকে দায়ী করা হয়েছে।
নাটকটি প্রচারের পর অভিভাবক ও দর্শকদের অভিযোগ, প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে অসুস্থ, আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য বার্তা দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদের মুখে ভুল স্বীকার করে ইউটিউব চ্যানেল থেকে নাটকটি তুলে নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক ও প্রযোজক।
‘ঘটনা সত্য’ নির্মাতা রুবেল হাসান জানান,’যে সকল মায়েরা দুঃখ পেয়েছেন আমি তাদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী। লকডাউন উঠে গেলে এই বিষয়টাকে নিয়ে আন্তরিকভাবে একটা বার্তা দিয়ে আরেকটি প্রডাকশনে যাবো। যে মায়েরা আমার কাজে দুঃখ পেয়েছেন। সেই মায়েরাই যেন আমাকে আন্তরিকভাবে ব্লেসিংস দেন যেন, তারা মনে করেন, ছেলেটা একটা ভুল করেছে। সে নিজেকে সুধরাতে পেরেছে।’
আপত্তিকর বার্তার জন্য কী কেবল অসাবধানতাই দায়ী? একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা-নাট্যকার-পরিচালক মামুনুর রশীদের মতে, নাটকের মান নিয়ন্ত্রণে অনেক দিন ধরেই কোনও ব্যবস্থা অনুসরণ করা হচ্ছে না। সেই ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছে ‘ঘটনা সত্য’। তবে নির্মাতার দায়ই মুখ্য।
ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন,’এই নাটকের পরিচালক এসেছিলেন আমার কাছে। বলেছেন এই নাটকের মধ্যে একটা বড় ধরণের ভুল হয়ে গেছে। আমি বলেছি, ভুল যখন হয়ে গেছে, তার খেশারত তোমাকে দিতে হবে। দায়টা পরিচালকের ওপরই পরে। অধিকাংশ চ্যানেলই সম্পূর্ণ নাটকটা দেখে নিয়ে প্রচার করবে সেটা করে উঠতে পারে না। এটাই একটা অস্থিরতার ফল। সামগ্রিকভাবে।’
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে নেতিবাচক, ভ্রান্ত ও ক্ষতিকর ধারণা প্রদান বা নেতিবাচক শব্দের ব্যবহার বা ব্যঙ্গ করলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ‘ঘটনা সত্য’ কেবল ভুল বার্তাই দেয়নি, অপরাধও করেছে- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা গেজেট/ টি আই