মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই গণআন্দোলনে সাতক্ষীরায় প্রথম শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ছিলেন পেশায় একজন রিকসা চালক। শহরে পাকিস্তান বিরোধী একটি মিছিলে মুসলিম লীগ নেতাদের গুলিতে নিহত হন আব্দুর রাজ্জাক। তার নাম অনুসারে সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী প্রাণসায়ের দিঘির পাড়ের চিলড্রেন পার্কটির নামকরণ করা হয় শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার জন্য প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দেন।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহবান করেন। কিন্তু হঠাৎ করে মার্চ মাসের ৩ তারিখের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। পাকিস্তান প্রেসিডেন্টে এই ঘোষণায় সমগ্র বাঙালি জাতি ক্ষুব্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেন।
শান্তিপূর্ণভাবে সারাদেশে হরতাল পালিত হওয়ার পর মার্চ মাসের ৩ তারিখ গোটা দেশ সভা-সমাবেশ গণমিছিলে রূপ নেয়। সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও এর প্রভাব পড়ে। মার্চের ৩ তারিখে সাতক্ষীরা মহাকুমার বিভিন্ন স্থানের সভা-সমাবেশ মিছিল শুরু হয়। শহরের মিছিলটি পাকাপুল পার হয়ে লাবনী সিনেমা হলের দিকে যাওয়ার পথে চাপড়া লজ থেকে মিছিলের উপর গুলি করা হয়। মুসলিম লীগ নেতা আতিয়ার রহমান, মতিয়ার রহমান ও লিয়াকাত আলি মিছিলে গুলিবর্ষণ করে বলে জানা যায়। তাদের ছোড়া গুলিতে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক রিক্সাচালক ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
মিছিলে গুলিবর্ষণ ও আব্দুর রাজ্জাক নিহত হওয়ার পর মিছিলটি জঙ্গী রূপ ধারণ করে। মিছিলে অংশ নেয়া লোকজন চরমভাবে উত্তেজিত হয়ে মুসলিম লীগ নেতা বারী খানের পাম্প থেকে পেট্রোল এনে চাপড়া লজে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সাতক্ষীরার পৌর দিঘির পূর্ব পাশে বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমীর পিছনে সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি ভবন এর উত্তর পাশে শহীদ আবদুর রাজ্জাককে সমাহিত করা হয়। এটি ছিল তখন চিলড্রেন পার্ক। পরবর্তীতে চেলড্রেন পার্কের নাম করা হয় শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক।
খুলনা গেজেট/ টিএ