খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরায় প্রথম শহীদ রিকসা শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযদ্ধে সাতক্ষীরা জেলার ছিল গৌরবোজ্জল ভূমিকা। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় সাতক্ষীরায় সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ মুক্তির আকাঙ্খায় হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, ঝাপিয়ে পড়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন মরণ যুদ্ধে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সাতক্ষীরায় প্রথম শহীদ হন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ছিলেন পেশায় একজন রিকসা চালক। শহরে পাকিস্তান বিরোধী একটি মিছিলে মুসলিমলীগ নেতাদের গুলিতে নিহত হন আব্দুর রাজ্জাক। তার নাম অনুসারে সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী প্রাণসায়ের দিঘির পাড়ের চিলড্রেন পার্কটির নামকরণ করা হয় শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার জন্য প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে পরামর্শ দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহবান করেন। কিন্তু হঠাৎ করে মার্চ মাসের ৩ তারিখের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। পাকিস্তান প্রেসিডেন্টে এই ঘোষণায় সমগ্র বাঙালি জাতি ক্ষুব্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেন।

শান্তিপূর্নভাবে সারাদেশে হরতাল পালিত হওয়ার পর মার্চ মাসের ৩ তারিখ গোটা দেশ সভা-সমাবেশ গণমিছিলে রূপ নেয়। সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও এর প্রভাব পড়ে। মার্চের ৩ তারিখে সাতক্ষীরা মহাকুমার বিভিন্ন স্থানের সভা-সমাবেশ মিছিল শুরু হয়। মার্চ মাসের ৭ তারিখের সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ হতে একটি মিছিল শহরের অভিমুখে রওনা হয়। মিছিলটি পাকাপুল পার হয়ে (বর্তমান নিউমার্কের দিকে) যাওয়ার পথে চাপড়া লজের সামনে পৌঁছালে চাপড়া লজ থেকে মিছিলের উপর গুলি করা হয়। মুসলিম লীগ নেতা আতিয়ার রহমান, মতিয়ার রহমান ও লিয়াকাত আলি মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। তাদের ছোড়া গুলিতে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক রিক্সাচালক ঘটনাস্থলেই নিহত হন। মিছিল গুলিবর্ষণ ও আব্দুর রাজ্জাক নিহত হওয়ার পর মিছিলটি জঙ্গী রূপ ধারণ করে। মিছিলে অংশ নেয়া লোকজন চরমভাবে উত্তেজিত হয়ে মুসলিম লীগ নেতা বারী খানের পাম্প থেকে পেট্রোল এনে চাপড়া আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই দিন সাতক্ষীরায় মিছিলে ছোড়া গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন হয়েছিলেন খলিলুল্লাহ ঝড়–, শেখ নিজাম উদ্দিন, আব্দুল ওয়াহেদ মিয়া, আজাদ আলী সহ আরো অনেকে। আর মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরায় প্রথম শহীদ হচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক।

পরবর্তীতে ছাত্র নেতা মোস্তাফিজুর রহমান পৌর দিঘীর চেলড্রেন পার্কটি শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক নামকরণের প্রস্তাব করলে সাতক্ষীরা শহরের সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক শেখ আবু নাসিম ময়নার সমর্থনে রাজ্জাককে শহীদ ঘোষণা করা হয় এবং তার নাম অনুসারে পার্কের নাম করা হয় শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক। ঐতিহ্যবাহী প্রাণসায়ের দিঘির পূর্ব পাশে বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমীর পিছনে সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী ভবন এর উত্তর পাশে শহীদ আবদুর রাজ্জাককে সমাহিত করা হয়। সেই থেকে সাতক্ষীরা শহরের পৌর দিঘীর চিলড্রেন পার্কটি শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক নামে পরিচিত হয়ে আসছে। এই শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কেই গড়ে উঠেছে শিল্পকলা একাডেমি, গণগ্রন্থগার ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। জেলার প্রায় সব ধরনের সামাজিক ও সাং®কৃতিক অনুষ্ঠানে এবং রাজনৈতি সভা সমাবেশ এই রাজ্জাক পার্ককে ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!