মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. হজরত আলী (৯০) আর নেই। স্ট্রোকসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মঙ্গলবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে তিনি উপজেলার নারায়ণপুরে (উত্তর কালিগঞ্জ শহীদ সামাদ স্মৃতি ময়দান সংলগ্ন) নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে, ৪ মেয়ে, নাতী-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
ডা. হজরত আলীর জামাতা কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তারালী ইউপি’র চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট জানান, বুধবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে শহীদ সামাদ স্মৃতি ময়দানে প্রথম জানাজা এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মথুরেশপুর ইউনিয়নের হাড়দ্দহ গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরহুমের দাফন সম্পন্ন হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানুষের অন্তরে ঠাঁই পাওয়া চিকিৎসক, সদালাপী, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ডা. হজরত আলীর মৃত্যুর খবর জানার পরপরই উপজেলাব্যাপী শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মরহুমের বাসভবনে আসছেন। তারা মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট কমান্ডের সর্বশেষ সাবেক কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, ডা. হজরত আলী ১৯৭১ সালে ভারতের শুন্যের বাগান ক্যাম্পে শরণার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিতেন এবং এজন্য বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের কাছ থেকে কোনো ভাতা কিম্বা সম্মানি নিতেন না। তিনি ভারতে অবস্থানকালে পরিবার পরিজন নিয়ে কাটাখালিতে অবস্থান করতেন এবং সন্ধার পরে চেম্বারে রুগী দেখে নিজের পরিবার ও ভাইবোন আত্মীয় স্বজনদেরকে নিয়ে একসাথে বসবাস করতেন।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিতে আবেদন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি একজন সংগঠক। তার হাত ধরে বহু যুবক সংগঠিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন। তাই তিনি সংগঠক হিসেবেই থাকতে চেয়েছেন। এ কারণেই অন্যদের অনুরোধ স্বসম্মানে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন সনদ তিনি নেননি। মহান মুক্তিযুদ্ধের কালিগঞ্জের অন্যতম সংগঠক ডা. হযরত আলীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন সাতক্ষীরা -২ আসনের এমপি মীর মোস্তাক আম্মদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, সাধারন সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশু প্রমূখ।
খুলনা গেজেট/এনএম