চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে রেললাইনে উঠে যাওয়া মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ যাত্রী নিহতের ঘটনায় গেটম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা শনিবার(৩০ জুলাই) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে এ থানায় শুক্রবার রাতে মামলাটি করেন সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম।
রেলওয়ে প্রকৌশলী আবু জাফর বলেন, ‘তাকে তো পুলিশ অলরেডি গ্রেপ্তার করেছে, তাই তাকে বরখাস্ত করা না করা আর কি। তাছাড়া উনি স্থায়ী সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত না, একটা প্রকল্পের অধীনে কাজ করেন। এটা অধস্থন কর্মকর্তারা দেখেন। তবে আমি খবর পেয়েছি তাকে অফিসিয়ালি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
দুর্ঘটনার পর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গেটকিপার সাদ্দামকে হেফাজতে নেয় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশ। মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
শুক্রবার বেলা সোয়া ১টার দিকে মীরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় অরক্ষিত একটি রেল ক্রসিংয়ে পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোকে ধাক্কা দিলে ১১ জন নিহত হন। তারা ঘুরতে গিয়েছিলেন খৈয়াছড়া ঝরনায়। ফেরার পথে কারও এক ভুলে ঘটে এ হতাহতের ঘটনা।
ঘটনার পর স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলা আন্তনগর ট্রেন মহানগর প্রভাতীর যাত্রাকালে মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে রেললাইন অতিক্রম করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেটি লাইনে ওঠার পর ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যায়।
সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম নিউজবাংলাকে জানান, বড়তাকিয়া স্টেশন থেকে ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসটিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যায় ট্রেনটি। গাড়িতে ১৮ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ১১ জন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন রেল ক্রসিংয়ে ছিলেন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
ঘটনার পর প্রাণহানির পুরো দায় মাইক্রোচালকের বলে দাবি করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেখানে রাস্তায় ক্রসিংয়ে সাদ্দাম নামের একজন গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি দাবি করেছেন যে সময়মতোই ক্রসিং বার ফেলেছিলেন। তার কথা অমান্য করে মাইক্রোবাসের চালক বারটি তুলে রেললাইনে গাড়ি তুলে দেয়। এতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
পরে রেলওয়ে কর্মকর্তার এ দাবি সত্য নয় দাবি করেন বেঁচে ফেরা দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোর যাত্রী জুনায়েদ কায়সার ইমন।
ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোর পেছনের সারিতে ছিলেন হাটহাজারীর কলেজছাত্র জুনায়েদ। তিনি জানান, ক্রসিংয়ে কোনো বার ছিল না। এ কারণে চালক গাড়ি টেনে নেন রেললাইনে।
তিনি বলেন, ‘ট্রেনের কোনো ব্যারিকেড ছিল না। ট্রেন যখন আসছিল তখন বৃষ্টি পড়ছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে ট্রেন আসছে। ড্রাইভার গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে ট্রেন এসে মেরে দিয়েছে। খেয়ালও করিনি। নিমিষেই ট্রেন চলে আসছে। আমি পড়ে গেছি পেছনে। কীভাবে পড়লাম, কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।’