মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১ রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৪ রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ায় বাংলাদেশ ভূখণ্ডের শূন্যরেখায় এ ঘটনা ঘটে।
বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) অশোক কুমার পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কোনাপাড়ার তুমব্রু সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে মর্টার শেল এসে পড়লে বিস্ফোরণ ঘটনায় ১ রোহিঙ্গা যুবক নিহত ও আরও ৪ রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন। নিহতের নাম ইকবাল হোসেন বারি (১৮)। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।’
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি বলেন, ‘নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পরিস্থিতির কারণে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কক্সবাজার উখিয়া কুতুপালং কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমারের ৫টি মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে পড়ে। এর মধ্যে ৩টি বিস্ফোরিত হয়। হতাহতদের রাত সাড়ে ৯টার দিকে উখিয়ার কুতুপালংয়ে এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এর আগে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে স্থলমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান।
আহত অন্য থাইং তংচঙ্গ্যা (২৮) ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হেডম্যানপাড়া এলাকা বাসিন্দা মৃত অংকেথাইন তংচঙ্গ্যার ছেলে। সীমান্তবর্তী ৩৫ নম্বর পিলার এলাকায় গরু চরাতে গেলে মাইন বিস্ফোরণে আহত হন। আর তার সঙ্গে থাকা একটি গরু মারা যায়।
এদিকে টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর আবারও মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বেলা ১১টার পর ফের ব্যাপক গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তের এপারও। এই নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তবাসীর মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, গত কয়েকদিন গুলির আওয়াজ না থাকায় সীমান্তের মানুষ শান্তিতে ছিল। কিন্তু শুক্রবার আবারও গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে। এতে করে সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। হালকা অস্ত্রের পাশাপাশি ভারী অস্ত্রের আওয়াজ হচ্ছে ওপারে। এতে সীমান্ত এলাকায় তাদের কাঁচা ঘর-বাড়িঘর কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে উঠছে।
উল্লেখ্য, গত একমাসের অধিক সময় ধরে মিয়ানমারের স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা, হামলা চলছে। তাদের অভ্যন্তরীণ হামলায় ব্যবহৃত গোলা দুই দফায় এসে পড়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে। এতে করে সীমান্তের মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্ত ঘেঁষা বিভিন্ন ক্ষেত খামারে যেতে ভয় পাচ্ছিল স্থানীয়রা। এরই জেরে শুক্রবার বিকেলে স্থলমাইনে আহত হয়েছেন বাংলাদেশি যুবক।