‘এই হত্যাকাণ্ডে আমরা কাউকে সন্দেহ করি না। আমরা কাউকে চোখে দেখিনি। আমি একটু ন্যায়-নীতিবান। একটা মিথ্যা নাম বলবো, সে রিমান্ডে যাবে, কষ্ট পাবে, তার বদদোয়া আমি নিতে রাজি না। পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি, আসামিরা অজ্ঞাতনামা, আমরা কাউকে চিনি না। যে প্রকৃত দোষী প্রশাসন তাকে ধরে শাস্তি দিন। আমি আল্লাহর কাছেও বিচার চাই আর প্রশাসনের কাছেও বিচার চাই।’
একনাগাড়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় কথাগুলো বলে গেলেন শুক্রবার (১১ জুলাই) দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোল্লা মাহাবুব হোসেনের পিতা করিম মোল্লা।
ছেলের হত্যাকান্ডে থানায় দায়ের করা মামলার বাদীও তিনি। খুলনা গেজেটকে তিনি বলেন, আমি চাই আমার ছেলের হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার হোক। প্রকৃত যে দোষী তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। এটা আমার দেশবাসী ও প্রশাসনের কাছে দাবি।
তিনি বলেন, আমার ছেলেটাকে মাঝে মধ্যে অজ্ঞাতনামা মোবাইলে হুমকি দিত। এটা শেষ টাইমে আমি শুনেছি বৌমার কাছ থেকে। কার্তিকুল, তেলিগাতী, মহেশ্বরপাশা পশ্চিম পাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী ঘোরাফেরা করে ইদানিং। অহরহ ঘুরতেছে।
ওই দিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, জুম্মার নামাজ পড়তে যাচ্ছি, ছেলেটা তখন বাড়ির সামনে গাড়ি পরিষ্কার করতেছে প্রাইভেট কার। সাথে একটা ছেলে ছিল, তারে পানি টানি বয়ে দেয়ার জন্য। তখন একটা বাজতে ৫/১০ মিনিট বাকি। আমি ছেলেটাকে রাগারাগি করতেছি এই বলে তোর প্রাইভেটকার আগে ধোয়া, জুম্মার দিন নামাজটা আগে পড়ে আই। সে বললো আব্বা আপনি জান, আমি আসতেছি। এরপর আমি মসজিদে গেছি, খুতবা হচ্ছে বাংলায়। চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ে মনে হয় ১ টা ১৫/২০ মিনিট এরকম সময় এক ভাইপো মসজিদে যেয়ে খবর দিছে আপনার ছেলেকে গুলি করেছে। মসজিদ থেকে এসে দেখি ছেলেটা পড়ে আছে। ২/১ জন লোক আশেপাশে ছিল তারা ভয়তে তুলিনি। আমি সবাইকে ডাকাডাকি করে খুলনা আড়াইশো বেডে নিয়ে গেলাম। গুলি ৭/৮ টা মারিছে অনুমান। তার পিছনে পায়ের রগ কেটে ফেলেছে। সে অবস্থায় আমি তাড়াতাড়ি যে গাড়িটা ছিল, সাথে কয়েকজন লোক নিয়ে সেটাই করে নিয়ে গেলাম। সেখানে জরুরি বিভাগে একজন ডাক্তারকে ডেকে দেখালে ডাক্তার বলতেছে আপনাদের আনতে লেট হয়ে গেছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছে। তখন আর কিছু করার নেই। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ থাকি। সংবাদ পেয়ে দলীয় লোকজন আসে। পরে বিকালে পোস্টমর্টেম শেষে রাত ৮/৯ টার দিকে বাড়িতে এনে গোসল করিয়ে জানাযা পড়াতে সাড়ে ১০টা ১১ টা বেজে যায়।’
তিনি বলেন, পোস্টমর্টেমে নয়টি গুলি পাওয়া গেছে।
পরিবার থেকে জানা গেছে, প্রায় ১৮ বছর আগে মাহাবুব প্রথম বিবাহ করে ফুলবাড়িগেট দারোগা বাজার এলাকায়। প্রথম স্ত্রীর দুইটা মেয়ে রয়েছে। পরবর্তীতে তিন বছর হলো দ্বিতীয় বিবাহ করে বাগেরহাটে। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে এক বছরের একটি ছেলে রয়েছে। প্রথম স্ত্রী মহেশ্বরপাশা বাড়িতে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী বাগেরহাটেই থাকতো। মাহাবুব মৃত্যুর পর দুই পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
মাহবুবের ছোট ভাই মিজানুর রহমান প্রশাসনের কাছে তার বড় ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার জোর দাবি জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম