ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যুবদল কর্তৃক চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ১১ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোহাগকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে উলঙ্গ করে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে সারাদেশের ধারাবাহিকতায় খুবিতেও গভীর রাতে নিন্দা ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণে (প্রধান ফটক) গিয়ে বিক্ষোভটি শেষ হয়।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হিজবুল্লাহ তামিম বিএনপি’র বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বলেন, “বিএনপি সারাদেশে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীতে লিপ্ত হয়েছে। পাঁচ মাসের ব্যবধানে তারা জুলাইকে ভুলে গিয়েছে। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে মাত্র ৩৬ দিনে এই বাংলাদেশ থেকে হটিয়েছি। এরকম আরও একটি বাহিনী যদি এখানে এমন ফ্যাসিস্ট হতে চায়, আমরাও তাদের হটিয়ে দেব।”
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.মুন্না হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যারা রক্তের সাথে রাজনীতি করে তাদের জায়গা হয় ভারতে। তারেক রহমান, আপনার নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি করে, টেন্ডারবাজি করে, খুন করে, আপনি কেন খবর নেন না? যদি আপনারা এই ধরনের রাজনীতি করেন তাহলে আপনাদেরও জায়গা হবে ভারতে। আপনাদের এই রক্তের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।”
তিনি সরকারের সমালোচনা করে আরও বলেন, “ইন্টেরিম আপনারা ছাত্রদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। আপনাদের বিচার ব্যবস্থা এত ভঙ্গুর কেন? কোনো হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার করতে পারছেন না কেন? আপনারা এই রক্তের সাথে বেইমানী করছেন। আপনারা আমাদের ভাই আবু সাঈদ, মুগ্ধের সাথে বেইমানী করছেন।”
বিক্ষোভ চলাকালীন দীর্ঘসময় ধরে বিএনপি নেতা তারেক রহমান ও তার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি পেশ করা হয়:
১. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. অভিযুক্ত মহিন এবং রবিনসহ সকল খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
৫. ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি করে বলেন, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা সর্বদা যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করব।”
খুলনা গেজেট/এনএম