খুলনা, বাংলাদেশ | ১৮ মাঘ, ১৪৩১ | ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়িতে বাসচাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত
  খুলনায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ৩, আহত ৮

মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরানো মৌলিক মানবাধিকার পরিপন্থী : মানবাধিকার কমিশন

গেজেট ডেস্ক 

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক বিএনপি নেতার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় মায়ের জানাজা পড়ানোর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

কমিশন বলছে, প্যারোলে মুক্তি দেয়ার পরও একজন বন্দীকে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয়, এটা বাংলাদেশের সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানায় কমিশন।

ওই বিএনপি নেতা আলী আজম কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় তাকে।

মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদের স্বাক্ষর করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়— আলী আজমের মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে গত ১৮ ডিসেম্বর মারা যান। শেষবার মায়ের লাশ দেখতে এবং জানাজায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেতে আইনজীবীর মাধ্যমে ১৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। গত ২০ ডিসেম্বর তিন ঘণ্টার জন্য তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয় এবং তিনি তার মায়ের জানাজায় উপস্থিত থাকার সুযোগ পান।

প্যারোলের পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন তিনি। এমনকি জানাজা পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেয়ার অনুরোধ করা হলেও তা খুলে দেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

কমিশন মনে করে, ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক প্যারোলে মুক্তি দেয়ার পরও একজন বন্দীকে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয়, বরং বাংলাদেশের সংবিধান ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না। পাশাপাশি কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডান্ডাবেড়ি পরানো বিষয়ক উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে সেটাও এক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েনসহ যথাযথ নজরদারির অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া সমীচীন ছিল। কিন্তু মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে অংশগ্রহণ অত্যন্ত অমানবিক। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য এ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণে যত্নবান হতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানায় কমিশন।

এর আগে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানিয়ে আসক বলেছে, এ ঘটনা কেবল অমানবিকই নয় বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।

আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচার বা দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া যাবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেয়া যাবে না। সংবিধানে এমন বিস্তৃত অধিকার থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ নাগরিককে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয় বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ডান্ডাবেড়ি পরানো বিষয়ক উচ্চ আদালতের যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটাও অনুসরণ করা হয়নি।’

আসক আরো বলেছে, ‘আলী আজম কোনো সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি নন বলে গণমাধ্যমে খবর বেড়িয়েছে বরং তিনি একটি গায়েবি রাজনৈতিক মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি রয়েছে, সে মামলার বাদি এই ঘটনা ও মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে মতামত ব্যক্ত করেছেন। আসক এ ধরনের নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অসংবেদনশীল আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!