‘মা খুব অসুস্থ। তাকে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু পকেটে টাকা নেই। টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউ টাকা ধার দেয়নি। বাধ্য হয়ে এক সুদ কারবারীর দারস্থ হলাম। সপ্তাহে সাড়ে তিন হাজার টাকা সুদে ৩৫ হাজার টাকা নিলাম। কোন উপায় নেই। মায়ের বড় সন্তান। তাই জড়িয়ে গেলাম কারেন্ট সুদ নামের রাহুগ্রাসে। সেই ৩৫ হাজার টাকার সুদ একলাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। ওই টাকা দিতে আরো ৪-৫ জনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছি। তাদের টাকা পরিশোধ করতে ভিটেমাটি সব হারিয়ে আজ আমি পথের ফকির। বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে পরের আশ্রয়ে আছি।’ রবিবার দুপুরে কান্নাজড়িতকণ্ঠে এমনটাই জানালেন সুদের দায়ে সহায়-সম্বলসহ সব হারানো শিব শংকর বিশ্বাস (৪১)।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুরমনি গ্রামের শীতল বিশ্বাসের ছেলে কৃষক শিব শংকর আরো জানান, কুরমনি মৌজায় তাদের ১৫ শতক বসতভিটা ও ৬৪ শতক চাষের জমি ছিল। মা, ছোট ভাই দিপঙ্কর ও স্ত্রী, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সুখ-শান্তিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে মায়ের অসুস্থতার কারণে সুদ কারবারীদের জালে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে জীবনে নেমে আসে ঘোর অমাবশ্যা। শুরু হয় সুদখোরদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন। বাধ্য হয়ে একে একে ভিটেমাটি জমি বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করেন। তাতেই সব হারিয়ে আজ পথের ফকির। বর্তমানে নবম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে শান্তা বিশ্বাস ও চতুর্থ শ্রেণীতে অনির্বাণ বিশ্বাস এবং স্ত্রীকে নিয়ে চরবানিয়ারী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, সুদ কারবারিদের নির্যাতনে চিতলমারীর কয়েক’শ পরিবার ভিটেমাটি, জায়গা-জমি ও গাড়ি-বাড়ি হারিয়ে আজ নিঃস্ব। এছাড়া সুদে কারবারিদের অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ফেলে বহু পরিবার পালিয়েছে। এখানে সুদের দেনার চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন কালশিরা গ্রামের ভাস্কার্য শিল্পী রাম প্রসাদ মালাকার, রুইয়ারকুল গ্রামের সনজিত ব্রু , সুরশাইল গ্রামের মাওলানা হারুন ও সর্বশেষ গত ২০ জুলাই সুদখোরদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে স্কুল শিক্ষিকা হাসিকনা বিশ্বাস (৩৮) আত্মহত্যা করেছেন।
এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক জানান, মাদক ও সুদ কারবারীদের বিরুদ্ধে চিতলমারী থানা পুলিশ জিহাদ ঘোষণা করেছে। সুদ ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন সুদ কারকারীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। চিতলমারী থেকে সুদ ও মাদক উচ্ছেদ করা হবে।
তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, মাদক ও অবৈধ সুদ কারবারীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। এছাড়া অবৈধ ভাবে অর্থলগ্নীকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে।
খুলনা গেজেট/এনএম