ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলের দখল নিতে হামলা চালিয়ে যাওয়া রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। তীব্র এই হামলা ও পাল্টা হামলার মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটির রাস্তায় লড়াই চলছে।
এই পরিস্থিতিতে মারিউপোল শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মরদেহ। এছাড়া বহু বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আগুনে। রোববার (২০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মারিউপোল শহরের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। প্রায় ৩ লাখ বেসামরিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে শহর থেকে বের হতে পারেননি। অল্প কিছু বেসামরিক নাগরিক যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তারা মারিউপোলের ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জানিয়েছেন, খাবার সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইউক্রেনীয় আইনপ্রণেতা ইয়ারোস্লাভ ঝেলজনিয়াকের বোনও কয়েকদিন আগে মারিউপোল শহর থেকে পালিয়ে যান। ঝেলজনিয়াক বিবিসিকে বলেন, ‘(রুশ আক্রমণ শুরুর) দুই সপ্তাহ পরে তাদের কোনো খাবার ছিল না। এছাড়া দোকানও বন্ধ ছিল। আর তাই সে (ঝেলজনিয়াকের বোন) জানিয়েছিল, চুরির মাধ্যমে কিছু খাবার জোগাড় করা বা না খেয়ে মারা যাওয়া; এই দু’টির মধ্যে একটিকে আমাদের বেছে নিতে হতো।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘মানুষ সবসময় ভয়ে থাকে যে কোনো বোমা, কোনো অস্ত্র বা কোনো বিস্ফোরণ তাদের হত্যা করবে। শহরের রাস্তায় রাস্তায় অনেক লাশ পড়ে আছে, অনেক বাড়ি-ঘরে আগুন লেগেছে, অনেক ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি ভেতরে আশ্রিত মানুষসহ অনেক বোমা শেল্টার বা আশ্রয়কেন্দ্রও ধ্বংস হয়ে গেছে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয়।
উল্লেখ্য, প্রায় পাঁচ লাখ বাসিন্দার মারিউপোল শহরটি দখল করা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি আজভ সাগরে ইউক্রেনের কৌশলগত বন্দর এবং ডনবাস অঞ্চলে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোর কাছেই অবস্থিত।