বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের দূর্নীতি, দুঃশাসন এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে মানুষের নাভিশ্বাস না শুধু, মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থা হয়েছে। আমরা যখন বাজারে যাই তখন এটা টের পাই। সাধারণ মানুষ ডিম কিনতে পারছে না, লাউ, শাক কিনতে পারছে না। কিন্তু ইলেকশনে গুণ্ডা, ইউএনও, ডিসিদের জন্য ৬৫ কোটি টাকার গাড়ি দিচ্ছে।
তাদের আলাদা করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই ডিসি, এসপি যারা নির্বাচন পরিচালনা করবে তাদের কাছে টাকা পৌঁছে গেছে।’
আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী দল আয়োজিত ‘কৃষি উপকরণ ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি: সরকারের অব্যবস্থাপনা-কৃষক এবং জনগণের নাভিশ্বাস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফকরুল বলেন, ‘অনেকে বলে, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা চাই, জনগণের ন্যূনতম যে অধিকারগুলো আছে সেগুলো যেন তারা পায়।’
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্রকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন বিএনপি নাকি সন্ত্রাসী দল।
অথচ তারাই (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’ বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের হাতে বন্দুক-পিস্তল নেই যে আপনাদের ভয় দেখাব, গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসব। নিয়ে গিয়ে আত্যাচার করব, নির্যাতন করব সেই পথ আমাদের নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। আমাদের হাতে একটাই উপায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা।
আমরা রাষ্ট্রের সকলকে আহবান জানাই রাস্তায় বেরিয়ে আসুন। হাতে আর কয়েকটা দিন সময় আছে, এই সরকারকে সরাতে না পারলে মানুষের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’
ফখরুল বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নজিরবিহীন। এর কারণ এই সরকারকে কোনো কিছুর জন্য জাবাব দিতে হয় না। ১৫ বছর ধরে সরকার দেশটাকে লুটের রাজ্যে পরিণত করেছে। প্রতিটি পয়সা মানুষের পকেট থেকে নিচ্ছে। তাদের এই লুটের পরিণতি আজকে বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে। যে ঋণ করছে সেগুলো মানুষের পকেট থেকেই নিচ্ছে। তারা তাদের ইচ্ছামতো যা খুশি তাই করছে।’
সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমার খাদ্য নিরাপত্তার অধিকার তো নিশ্চিত করতে হবে। সেই অধিকার তো গেছেই, আমাদের ভোটের অধিকারটাও কেড়ে নিয়েছে। বিচার পাওয়ার অধিকারও নাই। মগের মুল্লুক তৈরির যে প্রক্রিয়া এ থেকে তারা সহজে বের হতে চায় না। সুতরাং সরকারকে সড়ানোর বিকল্প কিছু নেই। একটাই ডাক, এই সরকারকে সড়াতে হবে। শেষ বারের মতো সরকারকে বলতে চাই, দয়া করে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সড়ে যান। দেশের মানুষকে বাঁচতে দেন।’
সেমিনারে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘কৃষিতে উৎপাদন পরবর্তী দুটি ধাপ রয়েছে- মার্কেট চেইন আর সাপ্লাই চেইন। এই দুটি ঠিক না থাকলে উৎপাদন করলেও লাভ নেই। এই সরকারের প্রতিপালিত সিন্ডিকেট এই দুটোই দখল করে রেখেছে। এই সরকার নিজেই বলেছে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করলেও কার্যকর করতে পারছে না। কারণ সরকারের সুবিধাভোগী অলিগার্করা মন্ত্রীদের কথা পাত্তা দেয় না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘সরকার খাদ্যপণ্য আমদানির তথ্য গোপন করে। হলুদ-রসুন থেকে শুরু করে চাল, সবই আমদানির উপর নির্ভরশীল। আমদানির খরচ বাড়তে বাড়তে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে গেলেও সরকারের কোন হুশ নেই। উল্টো বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন বলে মিথ্যা প্রচার চালায়। মিথ্যা পরিসংখ্যান দেখিয়ে অপপ্রচার চালায়। পরিসংখ্যানের সন্ত্রাস শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম হাতিয়ার।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সোনালী দলের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডির সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফর তুহিন প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/ টিএ