খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত
  খুলনার ফুলতলা উপজেলায় সুমন মোল্লা নামের একজনকে গুলি করে হত্যা
  সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পুড়ে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয় : ডিএমপি
  মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি ৬ মে পুনর্নির্ধারণ

মানুষের মুখের হাসি ফোটাতে কাজ করছে পুলিশের সাইবার টিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভুল নম্বরে যাওয়া টাকা ও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া ও চুরি বা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করছে খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল। ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও তথ্যপ্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার কাজ করে ভুক্তভোগী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছে পুলিশের এই সাইবার টিম।

খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল সূত্রে জানা যায়, গত ২২ মে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানা এলাকার তাজমুল হক একটি নম্বরে বিকাশে ১০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন করতে গিয়ে একটি ডিজিট ভুল করলে ওই টাকা অন্য নম্বরে চলে যায়। তার এলাকার বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে, খুলনা জেলার সাইবার সেল এ বিষয়ে কাজ করে ভুক্তভোগী লোকজনকে সহায়তা প্রদান করে থাকে। তখন তিনি বিষয়টি নিয়ে বটিয়াঘাটা থানায় একটি জিডি করেন। একই রকম ঘটনায় মোঃ শরিফুল ইসলামের ৭ হাজার টাকা ভুল নম্বরে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি ফুলতলা থানায় গত ২১ মে একটি জিডি করেন। সাইবার টিম ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও তথ্যপ্রযুক্তির যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে বটিয়াঘাটা ও ফুলতলা থানার সহায়তায় তাজমুল ও শরিফুলের সর্বমোট ১৭ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধার করা টাকা ভুক্তভোগী তাজমুল হক ও শরিফুল ইসলামকে ফেরত প্রদান করা হয়। তারা টাকা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন এবং পুলিশের এই কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এই ১০ জেলায় সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল কাজ করছে। ১০টি ইউনিটে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন ৯৪ জন সদস্য। ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর থেকে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল চালু হয়।

খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুশান্ত সরকার জানান, খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল উদ্বোধনের পর হতে গত ৩১ মে পর্যন্ত মোট প্রাপ্ত অভিযোগ বা জিডির সংখ্যা ৪৭৩টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তির সংখ্যা ২৭৯ টি। বাকীগুলো প্রক্রিয়াধীন।

তিনি বলেন, খুলনা পুলিশ সপার স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইবার টিম মানুষের সেবা প্রদানে কাজ করে চলেছেন। তাদের অভিযোগ বা জিডি আমলে নিয়ে দৈনন্দিন এসব কাজ করে যাচ্ছে। গত ৬ জুন রুপসা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও দিঘলিয়া থানা এলাকা থেকে হারানো ১৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। এভাবে প্রতিনিয়ত কাজ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাহিম রহমান রাফি নামে এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। সে থানায় জিডি করার পর খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম অফিসে এসে অভিযোগ দেয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার মোবাইল ফোনটি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে মোবাইল ফোনটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফাহিম রহমান রাফি বলেন, অসাবধানতাবশত মোবাইল ফোনটি হারিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় জিডির পর খুলনা সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলে অভিযোগ দেওয়া হয়। কিছুদিন পর পুলিশের সাইবার টিম থেকে ফোন করে জানানো হয় মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি ভাবতেও পারিনি যে মোবাইল ফোনটি পাওয়া যাবে। ফোনটি পেয়ে আমার খুব উপকার হয়েছে। এ জন্য পুলিশের সাইবার টিমের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহাবুব হাসান বলেন, বর্তমান সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন খুব স্বাভাবিক বিষয়।সহজভাবে টাকা পাওয়ার জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনগুলো হয়ে থাকে। এতে অনেক প্রতারক চক্রও সক্রিয়। অনেকে প্রতারিত হয়ে থাকে। আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি মাঠ পর্যায়ে। আমাদের বেশ সফলতাও রয়েছে। এ জন্য সামাজিকভাবে অনেক সাপোর্ট পাচ্ছি।

তিনি বলেন, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খঃ মহিদ উদ্দিন স্যারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল গঠন করা হয়। খুলনা রেঞ্জের ১০ জেলায় সাইবার টিম কাজ করছে। ডিআইজি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা রেঞ্জের প্রত্যেকটা জেলাতে আমাদের কার্যক্রম চলছে। বিশেষ করে সাইবার রিলেটেড যে কোন অপরাধের ক্ষেত্রে আমরা ডেডিকেটেড। এই ইউনিটের ১০ জনের মতো সদস্য কাজ করছে। সাইবার অপরাধসহ আর্থিক লেনদেনে প্রতারণা, মোবাইল লেনদেনের ক্ষেত্রে আর্থিক অসঙ্গতির বিষয়ে কাজ করছি। সাথে সাথে মোবাইল হারিয়ে বা চুরি-ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রত্যেকটি থানাতেও কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যেটা অনুভব করি যে প্রতিবন্ধকতার চেয়ে মানুষের সহযোগিতা করা। হয়তো একটি মোবাইল ফোনের আর্থিক মূল্যটা অনেক বেশি নয়, কিন্তু মোবাইলের সাথে তার অনেক কিছু সম্পৃক্ত। তার অনেক তথ্য বা নম্বর থাকতে পারে। এই মোবাইলের আর্থিক মূল্য দিয়ে যাচাই করা নয়, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করছি।

পুলিশ সুপার বলেন, সমাজে আমাদের মা-বোনেরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হয়। হেনস্তার শিকার হয়। এগুলো আমরা অফ দ্যা রেকর্ড আমলে নিয়ে কাজ করি। অনেককেই আমরা স্বস্তির একটা মুখচ্ছবি দিতে সক্ষম হয়েছি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!