রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে কর্মচারীদের ধাস্তাধস্তি ও মারধরে পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদাবর থানার (ইন্সপেক্টর অপারেশন) মো. ফারুক মোল্লা। তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোরে নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এই মামলায় অনেককে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর মানসিক হাসপাতালে কর্মচারীদের মারধরে এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছে তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর শ্যামলীতে তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।মারধরের ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনার পর তার মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলছে পুলিশ।
হারুন অর রশীদ বলেন, এএসপি আনিসকে মারধরের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ, ব্যবস্থাপনার জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকারি হাসপাতালের কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়া, মাইন্ড এইড নামের ওই বেসরকারি হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধাস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার পর হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাসপাতালে ঢোকার পরই আনিসুল করিমকে ৬ থেকে ৭ জন টেনে-হেঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। এ সময় একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুল করিমের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ ঘটনায় সোমবার রাতে প্রথমে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে আরও একজনকে আটক করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১ বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। সর্বশেষ আনিসুল করিম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারে দায়িত্বে ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম / এমএম