মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরই আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষ গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে সাহেবরামপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আন্ডারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্র জানায়, কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউপিতে আজ সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোট গ্রহণ কিছুক্ষণ চলার পরই শিকারমঙ্গল, গোপালপুর, সাহেবরামপুর ও আলীনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানকে কেন্দ্র করে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
সকাল ১০টার দিকে সাহেবরামপুর ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুল হাসানের সমর্থক মামুন ও বাদল হাওলাদার নামের দুজন অস্ত্র নিয়ে আন্ডারচর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এ সময় স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা তাঁদের বাধা দিতে গেলে শুরু হয় হট্টগোল। একপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রের পাশেই দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এ সময় আন্ডারচর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রায় আধা ঘণ্টা বন্ধ ছিল ভোট গ্রহণ।
এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় গোপালপুরে, ৯টায় আলীনগরে ও সাড়ে ৯টায় শিকারমঙ্গল কেন্দ্র দখল করে ভোট দিতে গেলে নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। এতে আহত হয় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন। খবর পেয়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্যরা ভোট কেন্দ্র গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আন্ডারচর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাপস বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতরে কেউ একজন অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেছেন—এমন খবরেই মূলত সংঘর্ষের সূত্রপাত। পরে কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষ ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ৩০ মিনিটের মতো ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। ১১টার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কেন্দ্রে পুলিশ, বিজিবি থাকলেও ভোটার ও আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
এদিকে বেলা ১১টার দিকে আলীনগর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১০৮ নম্বর দক্ষিণ কানাইপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রটি নৌকার সমর্থকেরা দখল নিতে গেলে সেখানেও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ এড়াতে বেলা ১১টা থেকে ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখেন ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. লিমন হোসেন বলেন, ‘ভোট গ্রহণের পরিবেশ না থাকায় আমরা সাময়িক সময় ভোট গ্রহণ স্থগিত রেখেছি।’
জানতে চাইলে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসতিয়াক আশফাক জানান, সাহেবরামপুরের খবর পেয়েই পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে পৌঁছে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সাহেবরামপুরে সংঘর্ষের পরই আমরা সেখানে যাই। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও পুলিশ দুর্বল থাকায় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তী সময়ে আমরা ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে সরিয়ে অন্য একজনকে দায়িত্ব দিই। আর অন্য যে কেন্দ্রগুলোয় ঝামেলা চলছে, সেগুলোতে সমাধান হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই