গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক ভূমিহীন পরিবারের। এবার এসব পরিবার গুলোকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে উদ্বোধন করা হলো সুবিধা ভোগী নারীদের উৎপাদিত পণ্যের ব্রান্ডিং। এর মাধ্যমে এসব পরিবারের নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি, অর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসন।
কোটালীপাড়ার দেবগ্রামে ভূমিহীন পরিবার গুলোর জন্য গড়ে তোলা হয় আদর্শ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে রয়েছে বই পড়ার জন্য লাইব্রেরী, শিশুদের জন্য খেলার সরঞ্জামসহ মাঠ। তবে এবার এখানকার নারীদের জন্য সৃষ্টি করা হলো কর্মসংস্থানের সুযোগ।
মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স-এর উদ্যোগে শনিবার(২৯ জানুয়ারি) দুপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্প চত্বরে সুবিধা বঞ্চিত নারীদের উৎপাদিত পণ্যের ব্রাইন্ডিং উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।
জেলা প্রশাসন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স সূত্রে জানাগেছে, গেলো বছরের ২৫সেপ্টেম্বর দেবগ্রাম আশ্রয়ণ প্রকল্পের অসহায় কর্মহীন ২১জন ও ৩৩ জন উপজাতি নারীদের আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচী হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
এসব হস্তশিল্পের মধ্যে রয়েছে মাফলার, বিছানার চাদর, থামি ও বউ টুপি। প্রশিক্ষণার্থীরা ইতোমধ্যে ৭৪ পিচ মাফলার, ৩০পিচ চাদর ও ৯৬পিচ বউ টুপি তৈরী করেছেন। প্রতিটি মাফলার পাঁচশত, চাদার এক হাজার ও বউ টুপি তিনশ টাকা দরে এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে উৎপাদনকারী নারীরা পারিশ্রমিক হিসেবে মাফলারের জন্য পাচ্ছেন দুইশত টাকা। চাদরের জন্য পাচ্ছেন চারশত টাকা আর টুপির জন্য পাচ্ছেন একশত টাকা করে।
হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কোটালীপাড়ার মেয়ে ক্রিস্টিনা দাস নদী এবং বান্দরবনের দিপ্তি রানী ত্রিপুরা ও আলনতি ত্রিপুরাসহ ৫জন। তারা জানান, অসহায় ও দরিদ্র নারীদেরকে তারা ট্রেনিং দিতে পেরে খুশি। কেননা তারা এখন থেকে স্বাবলস্বী হতে পারবে। নিজেদের প্রয়োজনে সংসারে টাকা খরচ করতে পারবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাজমা বেগম, শরীফা বেগম ও মিতালী হালদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্রয়স্থল দিয়েছেন। আবার আয়বৃদ্ধির জন্য মাফলার, চাদর ও টুপি বুনানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আগে আমাদের খুব খারাপ দিন গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা হয়েছে, সেই সাথে সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য আয়ের সুযোগও হয়েছে। এখন থেকে আমরা সংসারে স্বামীর পাশাপাশি রোজগার করে সংসারের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারবো। তারা এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ফাষ্ট কনসার্ন-এর হেড অব প্রোগ্রামস মার্ক রিপন সরকার জানান, সুবিধা বঞ্চিত এসব নারীদের বাংলাদেশ ইয়ূথ ফার্স্ট কনসার্ন্স এর উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যাতে এসব নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারবেন। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে পরিবার গুলো।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, এসব পণ্যের স্থানীয় বাজার সৃষ্টি ও অনলাইনে বিক্রি করাসহ যাতে বিদেশে রপ্তানী করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কেননা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নারীরা যে পণ্য তৈরী করেছেন তা বিশ্ব বাজারে বিক্রির মতো গুন সম্পন্ন। তারা যে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করছে তাতে তাদের জীবনমান একটা পর্যায়ে পরিবর্তন আসবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই