খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৭ জুন, ২০২৪

Breaking News

  ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাসের হেলপারসহ নিহত ২
  আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশাল জয় নিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা
  বলিভিয়ায় সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা, সেনাপ্রধান গ্রেপ্তার

মাঝবয়সে জীবনযুদ্ধে ১০ স্বর্ণ পদক জয়ী এ্যাথলেট মিরা খাতুন

একরামুল হোসেন লিপু

৪৬ বছর বয়সে এসে জীবন সংগ্রামের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ১০ স্বর্ণ পদক জয়ী এ্যাথলেটার মিরা খাতুন। শেষ পর্যন্ত দারিদ্রতাকে জয় করতে তাকে হাতে কেটলি তুলে নিতে হয়েছে। ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে কেটলি হাতে চা বিক্রয়ের মধ্য দিয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে প্রবল আত্মবিশ্বাসী মিরা খাতুন।

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ বছর ক্রীড়াঙ্গণে মিরা খাতুনের সাফল্য কৃতিত্ব এবং পরিচিতি ছিলো। এ সময়ের মধ্যে তিনি ইন্টার স্কুল প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে জেলা, বিভাগীয়, আঞ্চলিক, সেন্ট্রাল মিট, বাংলাদেশ গেমস, মাস্টার্স গেমসসহ জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জনের মধ্য দিয়ে ১০ টি স্বর্ণপদকসহ মোট ২০ টি পদক অর্জন করেছেন।

মিরা খাতুনের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের এক ক্রীড়ামোদী পরিবারে। চাচারা সবাই ছিলেন কৃতি ফুটবলার। ক্রীড়াঙ্গণে চাচাদের সুনাম এবং কৃতিত্ব দেখে ছোটবেলা থেকে তার এ্যাথলেটিক্সের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। বাড়ির সামনে দিঘলিয়া ওয়াই এম এ ‘র সুবিশাল খেলার মাঠ। মিরা খাতুন নিয়মিত সেখানে দৌঁড়ের প্র্যাকটিস করতেন।

দিঘলিয়া এম এ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালীন সময়ে ইন্টার স্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১০০ ও ২০০ মিটার স্পিনটার ও লং জ্যাম্পে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর যশোরে অনুষ্ঠিত জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার, ২০০ মিটার ও লং জ্যাম্পে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করে স্বর্ণপদক জয়ী হন।

শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌঁড়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। একই ইভেন্টে তিনি জাতীয় পর্যায়ে দুইবার স্বর্ণপদক পেয়েছেন। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি)’র পক্ষে আঞ্চলিক পর্যায়ে ৮০০ মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক জয় করেন। ঢাকায় আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৪র্থ জাতীয় বাংলাদেশ গেমসে অংশগ্রহণ করে ৮০০ মিটার দৌঁড় প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ এবং ৪০০ মিটার রিলে রেসে রৌপ্য পদক লাভ করেন।

কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের পক্ষে অংশগ্রহণ করে ১০০ মিটার ২০০ মিটার ও লং জ্যাম্পে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়নশীপ অর্জন করে স্বর্ণপদক জয়ী হন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মাস্টার্স গেমস প্রতিযোগিতায় ৪০০ মিটার দৌড়ে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন।

খেলোয়াড়ী জীবনে তার ২০ টি পদক অর্জনের মধ্যে রয়েছে ১০ স্বর্ণ, ১৫ টি ব্রোঞ্জ ও ৫ টি রৌপ্য পদক। এছাড়া এ্যাথলেটার হিসেবে ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য প্রায় অর্ধশত সনদপত্র অর্জন করেছেন।

৯১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ২৮ বছর এ্যাথলেটার হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ৮ নং সুফলাকাঠি ইউনিয়নের শ্বশুর বাড়ির এলাকা ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন।

ছোটবেলা থেকেই মিরা খাতুনের দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছে যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। পিতা খায়রুল মোল্লা ছিলেন ব্যক্তি মালিকানাধীন জুট কোম্পানির শ্রমিক। স্ত্রী এবং তিন ছেলেমেয়ের খরচ যোগাতে তাকে হিমশিম খেতে হতো। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে মিরা খাতুন ছিলেন সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে নানা প্রতিকূল পরিবেশ অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে তাকে সামনের দিকে এগোতে হয়েছে।

স্পোর্টসের পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়েছেন। ৯৪ সালে এসএসসি ও ৯৬ সালে এইচএসসি পাশ করার পর ভর্তি হন দৌলতপুর (দিবা/নৈশ্য) কলেজে। দারিদ্রতার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। খেলাধুলার সুবাদে বিজেএমসিতে চাকরি হয়েছিলো। ৩/৪ বছর সেখানে চাকরি করার পর ভাগ্য সহায় হয়নি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও ৬ মাস পূর্বে স্বামীর উপর অভিমান করে সংসার ছেড়ে চলে আসেন পৈত্রিক ভিটায়। শেষ আশ্রয় ছিল অসুস্থ মা। তিনিও ঈদুল আযহার কয়েকদিন পূর্বে মারা যান। তিন বছর পূর্বে বাবা মারা যায়। বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পর একমাত্র ভাই গোরা মোল্লা সেও স্টক করে মারা যায়। অসহায় মিরা খাতুনকে তার চাচারা সহযোগিতা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তিনি নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। চাকরি কিংবা অন্য কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে চায়ের দোকান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চা, পান, সিগারেট বিক্রি করে যা আয় রোজগার হচ্ছে তা দিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হচ্ছে মিরা খাতুনকে।

মিরা খাতুন খুলনা গেজেটকে বলেন, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস আছে। চা, পান,সিগারেট বিক্রি করে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। চাচারা সহযোগিতা করতে চেয়েছিলো কিন্তু তারা কত দিন সহযোগিতা করবে? এজন্য নিজে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করছি। চা পান সিগারেট বিক্রিতে আমার কোন লাজ লজ্জা নেই। সৎ পথে রুজি করে বেঁচে থাকতে চায়। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতার ভীতর দিয়ে বড় হয়েছি। দারিদ্রতা এখন আমার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!