চুয়াডাঙ্গার জীবননগর মাছের আড়ৎসহ বিভিন্ন খুচরা হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে রং মেশানো বিষাক্ত মাছ। বিলের ও নদীর মাছের মতো লোভনীয় হলুদ, বাদামি চকচকে তরতাজা দেখিয়ে চাষের মাগুর, কৈ ও শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারনত ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার কথা।
এদিকে বিদেশি এসব মাছকে দেশি বিল ও নদীর মাছ বলে গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করে ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এতে ঠঁকছে ক্রেতাসাধারণ। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও তারা।
গতকাল বুধবার সকালে জীবননগর-দত্তনগর সড়কের পাশে অবস্থিত মাছের আড়তে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রায় ১ মণ নিষিদ্ধ ঘোষিত আফ্রিকান মাগুর মাছ জব্দ করেন,পরে মাছগুলো ধ্বংস করা হয়।আর এসব বিষাক্ত মাছ রাখার দায়ে ব্যবসায়ী আশরাফ আলীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মোবাইল কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো.আরিফুল ইসলাম জীবননগর থানা-পুলিশ ও উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগীতায় আড়তে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এ সময় বিষাক্ত আফ্র্রিকান মাগুর মাছ বিক্রি করার অপরাধে মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ বলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জীবননগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আশরাফ আলীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আর জব্দকৃত মাছ জীবননগর পৌর পশুহাটে কেরোসিন তেল ঢেলে মাটিতে পুতে ধ্বংস করা হয়।
জানা গেছে, জীবননগর উপজেলা শহরের দত্তনগর সড়কে অবস্থিত মাছের আড়ত ও আন্দুলবাড়ীয়া বাজারের আড়ত গুলোতে সবচেয়ে বেশী মাছের আমদানি–রপ্তানি হয়। এসব আড়তগুলো থেকে বিভিন্ন বাজারে মাছের একটি বড় অংশ সরবরাহ করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে রং মিশ্রিত আফ্র্রিকান জাতের আমদানি নিষিদ্ধ মাগুর মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়।
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর লোভণীয় অবিকল দেশী শিং মাছ ও মাগুর মাছের মত রং হওয়ার কারণে এবং দামেও সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্রেতা সাধারন এসব মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মাছের গায়ের রং দেশীয় শিং কিংবা মাগুর মাছের মত সুন্দর দেখানোর কারণে অনেক সময় দামের ব্যাপারটি আমলে না নিয়ে তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ভোক্তা সাধারন। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা মিলবে মাছের গায়ে লাগানো অতিরিক্ত রংয়ের প্রলেপ। এসব মাছের গায়ে আছড় কাটলেই ক্ষতিকর রংয়ের আস্তর উঠে আসতে দেখা যায়। মাছ কাটার পর তা ভাল ভাবে ধৌত করা কালে পানির রং হলুদ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারের আড়তদাররা রং মেশানো আফ্রিকার মাগুর মাছ তাদের নিকট পাইকারী বিক্রি করে থাকেন। রং মেশানো শিং মাছ ও মাগুর মাছ দেখতে আকর্ষণীয় এবং দেশীয় মাছের মত দেখতে হওয়ায় ক্রেতা সাধারণের মধ্যে চাহিদাও বেশী। মাগুর ও শিং মাছে যে,রং ব্যবহার করা হয় তা অন্যান্য মাছের পচন রোধ করতে কাজে লাগে।
শামীম আহমেদ নামের একজন ক্রেতা বলেন,বর্তমান সময়ে বাজারে ব্যাপক ভাবে দেখতে আকর্ষণীয় ও তাজা শিং,মাগুর মাছের আমদানি দেখে এবং তা দামেও মোটামুটি সাশ্রয় হওয়ায় আমরা তা কিনে থাকি। কিন্তু এসব মাছ রং মেশানো ও আমদানি নিষিদ্ধ তা তো জানতাম না। এসব মাছ স্বাস্থ্যের জন্য যদি ঝুঁকিপুর্ণ হয় তাহলে প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না কেন?
ডা.আবু হেনা জামাল শুভ বলেন,রং মেশানো বিদেশী মাগুর ও শিং মাছ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ। এসব আমদানি নিষিদ্ধ মাছ খেলে ক্যান্সারসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, সংবাদ পেয়ে বুধবার (১২রঅক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে জীবননগর-দত্তনগর সড়কের পার্শ্বে একটি আড়তে অভিযান চালিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ আফ্রিকার এক মণ মাগুর মাছ জব্দ করি। আড়ত মালিক আশরাফ আলীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, মাছের গায়ে রং মেশানো এক প্রকার অপরাধ। সব মাছের আড়ত গুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।