খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

মাগফেরাতের প্রথম দিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাত আর নাজাত– এই তিন ভাগে বিভক্ত রমজানের মধ্যভাগ মাগফেরাতের আজ প্রথম দিন। পরম রবের প্রতি আত্মসমর্পিত ও আত্মনিবেদিত বান্দার জন্য সর্বাগ্রগণ্য আরাধ্য বিষয় হলো মাগফেরাত বা ক্ষমা। মাগফেরাতের পূর্বশর্ত হলো ইবাদত। ‘আদ দোয়াউ মুখ্‌খুল ইবাদাহ’ তথা ইবাদতের সারনির্যাস হিসেবে দোয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মহিমাময় রমজান হলো সেই প্রকৃষ্ট সময়; যখন পবিত্র কোরআন-হাদিস নির্দেশিত পন্থায় ইবাদতের মাধ্যমে রোজাদার বান্দারা মাগফেরাত তথা মহান প্রভুর ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার দুর্লভ সুযোগ লাভ করে থাকেন।

‘খুলিকাল ইনসানা জায়িফাহ’– আল্লাহপাকের এ ঘোষণা অনুযায়ী মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দুর্বল প্রজাতির মানুষের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হলো অপরাধ করা, পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়া; আর সেটি প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, ছোট কিংবা বড় গুনাহর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা। অন্যদিকে মহান স্রষ্টার অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো বান্দাকে ক্ষমা করা, মাফ করে দেওয়া। তবে এ জন্য বান্দাকে অনুশোচনায় আচ্ছন্ন হতে হয়, তওবার শর্তাদি পরিপালনের মাধ্যমে পরম রবের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বীয় মস্তক অবনত করতে হয়। অপরাধের বিষয়ে লজ্জিত হওয়া, যাবতীয় পাপাচারের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আর ভবিষ্যতে কখনও পাপাচারে লিপ্ত না হওয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়াই তওবা কবুলের পূর্বশর্ত। এ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন তওবার মাধ্যমে বান্দাকে নিষ্পাপ-নিষ্কলুষ ঘোষণা করা হয়; ‘আত্তায়িবু মিনাজ্‌জানবি কামাল্লা জান্‌বা লাহু’, অর্থাৎ পাপাচার থেকে তওবাকারী এমন হয়ে যায় যে সে কোনো পাপই করেনি। পবিত্র রমজানে রোজাদার বান্দাকে সিয়াম সাধনার এ অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ইবাদত ঘনিষ্ঠতার দিক থেকে মহান আল্লাহর অতীব নিকটবর্তী করে দেয়; যে সুযোগে বান্দা কায়মনবাক্যে সম্পন্ন ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে পরম সত্তার পক্ষ থেকে মাগফেরাতের নেয়ামত লাভে ধন্য হতে পারে। রমজানের চলমান এই মধ্য দশক হচ্ছে সেই উপযুক্ত সময়, যখন মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করার ওসিলা খোঁজেন।

দোয়া স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে দেয়, দোয়া এ দুয়ের মাঝে তফাতের অবসান ঘটিয়ে ঘনিষ্ঠতার পরশ বুলিয়ে দেয়; সর্বোপরি মহান রবের সঙ্গে বান্দার প্রেমময় সম্পর্কের শক্ত ভিত গড়ে দেয় দোয়া বা মোনাজাত। জগতের মানুষ যত সম্পদশালীই হোক না কেন, কোনো কিছু চাইলে রাগ করে, অসন্তুষ্ট হয়; কিন্তু আল্লাহপাক এমন এক সত্তা, যাঁর কাছে বরং কোনো কিছু না চাইলে তিনি রাগ করেন, অসন্তুষ্ট হন। কেননা তাঁর নামই যে তিনি রেখেছেন ক্ষমাশীল, করুণাময়, দাতা ও দয়ালু। তাই ‘ওয়া ইজা সাআল্‌তা ফাসআ লিল্লাহ’, অর্থাৎ কোনো কিছু চাইলে আল্লাহর কাছেই চাও, ‘ওয়া ইযাস্‌ তাআন্‌তা ফাসতাইন বিল্লাহ’, অর্থাৎ কোনো কিছুর সাহায্য প্রয়োজন হলে সরাসরি আল্লাহর কাছেই তার নিবেদন করো।

পবিত্র রমজান সেই মোক্ষম সময়, যখন আমরা নিবিষ্ট-চিত্তে মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষী হয়ে, নিজেদের পুরো অস্তিত্ব উজাড় করে দিয়ে, তওবার অঙ্গীকার শাণিত করে, যাবতীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে খোদাতায়ালার আস্থাভাজন ও প্রিয়পাত্র হতে পারি। পবিত্র এ রমজানে আমরা বলি, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্‌নার’, অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাত নসিব করো আর জাহান্নাম থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই। ‘আল্লাহম্মা আজিরনা মিনান্‌নার ইয়া মুজির’, অর্থাৎ ওহে প্রভু! আমাদের নরকাগ্নির অভিশাপ থেকে মুক্তি দাও, কেননা তুমিই তো রক্ষাকারী। ‘আল্লাহুম্মা আদ্‌খিলনাল্‌ জান্নাতা মাআল আবরার’, অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার পুণ্যবান বান্দাদের সঙ্গে আমাদেরও জান্নাতে প্রবেশ করাও।

‘তোমরা আমায় ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’– মহান আল্লাহর এই বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমাদের বিনীত প্রার্থনা– ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন সাইয়িইল আসকাম’, অর্থাৎ হে আল্লাহ সর্বপ্রকার ব্যাধি থেকে আমরা তোমার কাছে পরিত্রাণ চাই। একই সঙ্গে রোজাদার হিসেবে আমরা হৃদয়ের বিশালতা আর মহানুভবতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বলব– ‘আস্তাগফিরুল্লাহালি ওয়ালাকুম ওয়ালি সায়িরিল মুসলিমিনা ফাস্তাগফিরুহু ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহিম’, অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি আমায় ক্ষমা করো, আমাদের সবাইকে মাফ করো, সমস্ত মুসলমানের ইস্তেগফার কবুল করে নাও; নিশ্চিতভাবেই তুমি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!