পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দশক পেরিয়ে দ্বিতীয় দশকে আমরা উপনীত। রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই দশক। এ দশকেই মোমিনের পরম কাঙ্ক্ষিত মাগফেরাত বা ক্ষমা অর্জিত হয়। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘এটা এমন এক মাস, যার প্রথম ১০ দিন রহমতের ঝরনাধারায় পরিপূর্ণ, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফেরাতের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভের (সহিহ ইবনে খুজাইমা)।’
রমজানের প্রতি রাত ও দিনে অগণিত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মোমিনের দোয়া কবুল হয়। এই মাসে পারলৌকিক মুক্তি অর্জনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি বলেন, ‘মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন– হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো। তিনি আবার ঘোষণা করেন, ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে (তিরমিজি)।’
যাবতীয় পাপ-পঙ্কিলতা, অন্যায়, অপরাধমূলক চিন্তাভাবনা ও অসৎকাজ থেকে বিরত থেকে রমজান মাসে রোজাদার যখন রোজা রেখে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সৎপথে পরিচালিত হন, তখন প্রথম ১০ দিন তিনি রাব্বুল আলামিনের রহমত ও অনুগ্রহ লাভে ধন্য হন। এর পর যখন এমনিভাবে রমজান মাসের আরও ১০ দিন অতিবাহিত করেন, তখন আল্লাহতায়ালা তাঁর পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। এভাবে যখন তিনি শেষ ১০টি দিন সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেন, তখন রোজাদার জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তির নিশ্চয়তা লাভে ধন্য হন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয় (সহিহ বুখারি)।’ অপর হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রমজান শেষে রোজাদার গোনাহ থেকে ওই দিনের মতো পবিত্র হয়, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)।
বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা বিভিন্ন উপলক্ষ খোঁজেন। রমজান সে ধরনের একটি বড় উপলক্ষ। এ মাস উপলক্ষে অগণিত পাপী-তাপী বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহর ক্ষমার সেই ভান্ডার পুরোপুরি খুলে দেন রমজানের মধ্য দশক বা মাগফেরাত পর্বে। আমাদের জীবনে পাপের কোনো শেষ নেই। একমাত্র আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছাড়া আমরা কেউই মুক্তির আশা করতে পারি না। রমজান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের বিশেষ উপলক্ষ। এ মাসে কেউ আল্লাহর কাছে প্রকৃত অর্থে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন বলে নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহর দেওয়া এই মহাসুযোগকে হেলাফেলায় নষ্ট করা কারও উচিত নয়। এই রমজানে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে আমরা সহজেই পারি আমাদের বিগত দিনের পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে।
খুলনা গেজেট/এইচ