খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

মরিশাসে গোপন সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

‘আমরা একটি বিমানবন্দর আর হাসপাতাল চেয়েছিলাম। কিন্তু এত বড় বিমানবন্দর আমরা চাইনি। এই বিমানবন্দর দেখলে আমরা শঙ্কিত হই।’ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে, কথাগুলো বলছিলেন ফ্রান্সো পৌলে নামের এক ব্যক্তি। তিনি মরিশাসের আগালেগা দ্বীপের বাসিন্দা। দ্বীপটিতে তিন শ বা তার কিছু কম-বেশি মানুষের বাস। তারা সবাই ওই বিমানবন্দর নিয়ে ভীত-শঙ্কিত।

আল-জাজিরার একটি বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিমানবন্দরটি মূলত ভারতীয় সেনাদের জন্য নির্মাণাধীন সামরিক ঘাঁটি। গোপনে তারা এটা নির্মাণ করছে। ভারত সরকার সেখানে গোপনে একটি নৌ-ঘাঁটি তৈরি করছে।

আগালেগার বাসিন্দারা এখন এই ভেবে আতঙ্কিত যে, সেখানে ভারতীয় সেনারা ঘাঁটি গাড়লে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা দেখেছে কী করে গত দুই বছর ধরে তিন কিলোমিটারের একটি রানওয়ে নির্মাণ করেছে ভারত। একই সঙ্গে তারা সেখানে বেশ বড়সড় দুইটি জেটির নকশাও তৈরি করেছে। যা মূলত সামরিক কাজে ব্যবহার করা হবে।

সামরিক বিশ্লেষকেরা তাদের অনুসন্ধানী তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে দাবি আল-জাজিরার। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দ্বীপটি সম্ভবত ভারতীয় নৌবাহিনী সামুদ্রিক গোয়েন্দা এবং শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারির কাজে ব্যবহার করবে।

২০১৮ সালের দিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভারতের এই গোপন সামরিক ঘাঁটির বিষয়ে খবর বের হয়। কিন্তু মরিশাস ও ভারত দুই দেশের পক্ষ থেকেই এই নির্মাণ প্রকল্প সামরিক কাজে ব্যবহৃত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে। দুই দেশ তখন দাবি করেছিল এসব অবকাঠামো সেখানকার বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য নির্মাণ হচ্ছে।

যদিও দুই দেশের আনুষ্ঠানিক এই বক্তব্য কোনোমতেই বিশ্বাস করছেন না আগালেগার বাসিন্দারা। যাদের প্রধান জীবিকা মাছ শিকার ও নারকেল চাষ করা। তাদের ভাষ্যমতে, আড়াই শ মিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্প তাদের জন্য, এটা তারা বিশ্বাস করে না।

ফ্রান্সো পৌলের ভাই আরনাউড পৌলে বলেন, ‘আমাদের একটি বিমানবন্দরের খুব দরকার। কিন্তু আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি যেটা বানানো হচ্ছে সেটা আমাদের লাভের জন্য নয়। এখানকার কোনো বাসিন্দাকে নতুন বন্দরে কাজ করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। তাই এটা নিশ্চিত যে সেখানে ভারতীয় শ্রমিকেরা কাজ করবে। আমাদের ছেলে বা যুবক যারা বেকার তাদের কাউকেই এখনো কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।’

আগালেগার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন তাদের পরিণতি হবে ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের মতো। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকেরা যেটি আমেরিকাকে লিজ দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের দিকে সেটিকে নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করে যুক্তরাষ্ট্র। একসময় সেখানকার বাসিন্দাদের অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

বর্তমানে সেখানে মার্কিন সাবমেরিন ইউনিট ও বোমারু বিমানের ১৫টি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

ডিয়েগো গার্সিয়া, শাগোস দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ। যুক্তরাজ্য ও মরিশাসের মধ্যে এই দ্বীপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। চলতি বছরের শুরুতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, শাগোস দ্বীপপুঞ্জের ওপর যুক্তরাজ্যের কোনো অধিকার নেই। কিন্তু যুক্তরাজ্য বলছে, তারা এটি তখন ফিরিয়ে দেবে যখন থেকে এটি আর প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহৃত হবে না।

ডিয়েগো গার্সিয়াতে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের আগে যারা সেখানকার বাসিন্দা ছিল; পরবর্তীতে যাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, তারা আজও নিজ ভূমিতে ফিরতে লড়াই করে আসছে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কলেজের গবেষক স্যামুয়েল বেশফিল্ড বলেন, আগালেগায়ও গার্সিয়ার মতো ঘটনা ঘটবে। তবে তিনি মনে করেন, মরিশাস তাদের দ্বীপের সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা ভারতের কাছে দিয়ে দেবে না।
এ দিকে দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে, দ্বীপের বাসিন্দাদের বিতাড়িত করা হবে না। তারা এখনো সেখানে থাকতে পারবেন।

বেশফিল্ড মনে করেন, কিছু জিনিস অবশ্যই পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরের যে অংশের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে সেটি ব্যবহার করে খুব শিগগিরই ভারত তাদের সমুদ্রসীমায় টহল শুরু করবে। বেশফিল্ড আরও বলেন, সামরিক ঘাঁটির কার্যক্রমের কিছু প্রভাব তো অবশ্যই রয়েছে। সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ হলে সেখানকার জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবে। ঘাঁটির ভেতর দিয়ে বেসামরিক মানুষজনকে হাঁটতে দেওয়া হবে না—এটা তো নিশ্চিত।

নিজেদের সীমানায় ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়ে মরিশাস সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। মরিশাস সরকার বলছে, আগালেগায় সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়ে ভারত ও মরিশাসের মধ্যে কোনো চুক্তি হয়নি।
এ বিষয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে আল-জাজিরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ভারত ও মরিশাসের মধ্যে আগালেগার উন্নয়নের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!