ব্যতিক্রম হলো না ২০২৩ সালের পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সূচিপত্র ঘোষণা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার (৯ জুন) থেকে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা। নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রথম দিনেই খুন হলেন এক কংগ্রেস কর্মী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মুর্শিদাবাদের কান্দির খড়গ্রামে খুন হন এক কংগ্রেস কর্মী। নিহতের নাম ফুলচাঁদ শেখ। তার বয়স ৪২ বছর। পেশায় তিনি ছিলেন অভিবাসী শ্রমিক। কেরলে থাকতেন ফুলচাঁদ। বাড়ি ফিরেছিলেন দিন কয়েক আগেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বাড়ির সামনে শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন ফুলচাঁদ। সেখানে আচমকা মোটরসাইকেলে শাসকদলের ৪ দুষ্কৃতী এসে হম্বিতম্বি শুরু করে। সেই সময় নাকি ফুলচাঁদ তাদের বলেন, ঝামেলা না করতে। সঙ্গে সঙ্গে কোলের শিশুকে দূরে ছুড়ে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করা হয় তাকে। পরপর ৬টি গুলি করা হয় ফুলচাঁদ কে লক্ষ্য করে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কিছুক্ষণ পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই খুন করেছে ফুলচাঁদকে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল।
এদিকে মনোনয়ন জমা করাকে কেন্দ্র করেও ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় মুর্শিদাবাদ জেলারই রানীনগরে। অভিযোগ, শুক্রবার রানীনগর ১নং ব্লকের সিপিআইএম কর্মীরা ইসলামপুর বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা করতে গেলে সেখানে তৃণমূলের কর্মীরা বাঁধা দেয়। আর তারপরেই তৃণমূল কর্মীদের রীতিমতো লাঠি নিয়ে তাড়া করে সিপিআইএম কর্মীরা। বিডিও অফিসের সামনে তৃণমূল কর্মীদের অস্থায়ী ছাউনি ভেঙে দেওয়া হয়। বেশ কিছু মোটরসাইকেল, টেবিল, চেয়ার ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ। এ ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। ঘটনায় দুই পক্ষের সবমিলিয়ে প্রায় ১৪ জন আহত হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
প্রসঙ্গত মুর্শিদাবাদ জেলা বরাবরই রাজনৈতিক সংঘাত প্রবণ। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত হন ২৩ জন। ২০১৮ সালে শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে রক্তের বন্যা দেখছিল বাংলা। নির্বাচনের আগে নির্বাচন পরবর্তী হিংসায় খুন হয়েছিলেন শাসক ও বিরোধী দলের শতাধিক নেতা কর্মী। এমন অবস্থায় রক্তপাতহীন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘রক্তপাতহীন নির্বাচন সম্ভব নয় এই পুলিশকে দিয়ে, সেকারণেই কেন্দ্রীয় বাহিনী বলেছিলাম। মনোনয়ন জমার ৭ দিন আগে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন ছিল। মৃত্যু দিয়ে শুরু হল একটা নির্বাচন। এর থেকে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে’!
খুলনা গেজেট/এসজেড