হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) ভোরে মৃত্যুবরণ করেছেন রোকেয়া বেগম। বসতবাড়ীসহ পারিবারিক কবরস্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারনে পারিবারিক কবরস্থনের মাটি টুকু কপালে জুটলোনা তার। বাধ্য হয়ে লাশ অন্যত্র নিয়ে দাফন করতে হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে মণিরামপুর উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে।
জলাবদ্ধ ভবদহ এখন মৃত্যু কূপে পরিনত হয়েছে। সম্প্রতি এ এলাকায় এক গৃহবধূ নৌকা থেকে পানিতে পড়ে মারা গেছেন। অপর এক গৃহবধূ টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে ফেরার সময় পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন। এভাবেই অভিশপ্ত ভবদহের করাল গ্রাসে জলাবদ্ধ মানুষের জীবন-যাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি গো-খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে কেউ মারা গেলে নিজ এলাকায় দাফন ও সৎকারে বিঘ্ন ঘটছে।
জানাযায়, যশোর জেলার মণিরামপুর, অভয়নগর ও কেশবপুর এবং খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার আংশিক এলাকার লাখো মানুষ পানিবন্দি। মরণফাঁদ অভিশপ্ত ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে চার দশক ধরে হাজার হাজার পরিবার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এছাড়া কৃষকরা হারিয়েছেন হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল। ভবদহ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক গ্রামের অধিকাংশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ সমস্ত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও তেমন কেউ খোঁজ খবর নিচ্ছেন না বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির মশিয়াহাটি আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস জানান, হঠাৎ করে আকাশ বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ভবদহ বিলপাড় সংলগ্ন গ্রামগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ খাদ্য, চিকিৎসা এবং বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটে পড়েছে। এ ব্যাপারে সরকারী-বেসরকারী পর্যায় থেকে পানিবন্দি মানুষের খোঁজ নেয়া হচ্ছেনা।
অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তা অথবা উঁচু কোন স্থানে টোং ঘর বেঁধে কোন রকম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মানুষ মারা গেলে দাফন করার জায়গা মিলছে না। অনেক মৃত ব্যক্তির দাফন করতে দূরের কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য পাল জানান, ‘ভবদহের সমস্যার কারণে মানুষ যে অবস্থায় ছিলো, হঠাৎ ক’দিনের বৃষ্টিতে জল বেড়ে যাওয়ায় আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা।’
খুলনা গেজেট/ এস আই