নানা ঘটনায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে এবং পারিবারিক কলহের জের ধরে গত তিন মাসের ব্যবধানে যশোরের মণিরামপুরে শিশু-কিশোর ও গৃহবধূসহ অন্তত ৫০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক নানা কারণে অতিরিক্ত চাপ কিংবা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পৃথিবী থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধন্তে এমন প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে গত ৩ মে উপজেলার চাকলা গ্রামের মাঠপাড়ার আবু মুছার পুত্র কলেজ ছাত্র রাকিব হাসান (২০), ২২ মে পৌর এলাকার জুড়ানপুর গ্রামের কাজীপাড়ার মজনু সরদারের কন্যা রীনা বেগম (৩০), ২৬ মে পলাশী এলাকার অলি মোহাম্মাদের পুত্র জহির হোসেন (৪২), কাঁঠালতলা এলাকার অশোক দাসের স্ত্রী ডলি দাস (৩০), ২৭ মে একই গ্রামের সুখদেবের পুত্র অশোক কুমার (৪৩), নিশ্চিন্তপুরের মামুন হোসেনের স্ত্রী লতা বেগম (৩৫) ও ৩০ মে উপজেলার কপালিয়া এলাকার নজরুল ইসলামের স্ত্রী ফতেমা বেগম (৪১), ১০ জুন চিনাটোলার দেব কুমারের কন্যা বৃন্তিকা পাল (১৭), ১৮ জুন খর্দ্দো গাংড়া গ্রামের টিটু হোসেনের পুত্র লিথুন হোসেন (১১), ২৪ জুন সুজাতপুরের রতন বিশ্বাসের পুত্র অঞ্জন বিশ্বাস (৫৫), ২৫ জুন ঘুঘুরাইল গ্রামের ঝন্টু সরদারের পুত্র করিম সরদার (৫৫), ২৮ জুন সুন্দলপুরের সামাদ বিশ্বাসের পুত্র হাফিজুর রহমান (৩৫) ও হাজরাকাটির সাখাওয়াত মোড়লের স্ত্রী রুমা খাতুন (২২), ২ জুলাই রতনদিয়ার এনামুল হকের স্ত্রী কোহিনুর খাতুন (২৬), ৩ জুলাই ভুলবাড়িয়া গ্রামের মৃত জানাতি বিশ্বাসের পুত্র রতন বিশ্বাস (৯৫), ৪ জুলাই খানপুরের হাফিজুর রহমানের পুত্র শরিফুল ইসলাম (২১), ৮ জুলাই চাপাকোণা গ্রামের হীরক মন্ডলের পুত্র লংকেশর মন্ডল (৭০), ১৬ জুলাই বালিয়াডাঙ্গার অনন্ত দাসের পুত্র বিপ্লব দাস (২৫), শ্যামনগরের শহিদুল ইসলামের পুত্র রনি আহম্মেদ (২২), ২২ জুলাই মনোহরপুরের আকাম মহলদারের পুত্র শাহানুর রহমান (৩৫), ২৩ জুলাই সুবলকাটির মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৪০), হানুয়ারের মিজানুর রহমানের কন্যা সুরাইয়া খাতুন (২৮), ২৬ জুলাই সমসকাটির মুনছুর বিশ্বাসের পুত্র সুজন বিশ্বাস (২৫), ১ আগস্ট বাটবিলা গ্রামের আব্দুর রহিম গাজীর পুত্র আব্দুর রাজ্জাক (৬০), ৩ আগস্ট সিংহের খাজুরা গ্রামের সুখচাঁদ দফাদারের পুত্র ইসমাইল হোসেন (২৪), ৬ আগস্ট পাঁচাকড়ির শৈলন মন্ডলের কন্যা বিশাখা মন্ডল (৩৫), ৭ আগস্ট দেবিদাসপুর গ্রামের করিম গোলদারের পুত্র আমির আলী গোলদার (৭০) এবং ৮ আগস্ট বাকোশপোল গ্রামের দীপক বিশ্বাসের স্ত্রী অর্চনা বিশ্বাস (৪০) সহ ৩ মাসের ব্যবধানে অর্ধশত নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেন।
এরমধ্যে চাঞ্চল্যকর ঘটনার অংশ হিসেবে চলতি মাসের ৭ আগস্ট স্বামীর পরকীয়ায় প্রতিবাদ করে নির্যাতন সইতে না পেরে উপজেলার কুলটিয়া এলাকায় কোলের শিশু কন্যাকে হত্যার পর একই স্থানে আত্মহত্যা করেন মা পিয়া মন্ডল (২২)। জানাগেছে, এসমস্ত আত্মহত্যার ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে মাত্র কয়েকটি। আশংকাজনকহারে এমন আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রশাসনসহ সচেতন মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
জানতে চাইলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক সুরাইয়া আক্তার বলেন, এ থেকে পরিত্রান পেতে কাউন্সিলিং করাসহ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর সরকারি এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক শাহিন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে কারো ওপর জোর করে বল প্রয়োগ করা হলে, তখন অতিরিক্ত চাপে ভেঙ্গে পড়ে। এছাড়া গভীর হতাশায় মানুষ যখন জীবনের মূল্য খুঁজে পায় না কিংবা অভাবগ্রস্থ হয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয় তখন নিজেকে প্রথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, যে হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু চলতি মাসেই ১০ দিনের ব্যবধানে ৭ জনের আত্মহত্যার দায়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই