যশোরের মণিরামপুরে মেধাবী কলেজ ছাত্রকে মিথ্যা অপবাদে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশকে নিয়ে নিহতের পরিবারের অভিযোগ আর আর্তনাদ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মায়ের আর্তনাদ ‘‘আমার সোনারে ওরা চিকিৎসা না করিয়ে হাতকড়া পরিয়ে ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখে। আমার সোনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা পূরণ হলো না। আমার সোনা কয়েকদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে, তার চিকিৎসা চলছে। এ কথা বলার পরও পুলিশের মন গলেনি। পুলিশ চিকিৎসার কাগজপত্র আনার কথা বলে। বাড়ি থেকে কাগজ নিয়ে তাদের দেখানোর পর আমার সোনারে ওরা ছেড়ে দিলে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেয়া হয়।”
আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন নিহত কলেজ ছাত্র বোরহানুল কবীরের মা রঞ্জু বেগম। নিহত মেধাবী কলেজ ছাত্রের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। তার মায়ের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছিলো। চিৎকার দিয়ে ছেলের কথা বলছিলেন আর মুর্ছা যাচ্ছিলেন মা রঞ্জু বেগম। এমনকি মায়ের গগণ বিদারি কান্নায় উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। প্রতিবেশিসহ স্বজনদের শান্তনায় ছেলে হারানোর শোক চাপা দিতে পারছিলেন না মা রঞ্জু বেগম। মঙ্গলবার ৯ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন নিহত বোরহানুল কবীরের মোহনপুর গ্রামের বাড়িতে গেলে এসব চিত্র চোখে পড়ে।
সাংবাদিকদের সামনে নিহতের মা রঞ্জু বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, “আমার সোনারে পড়ানোর জন্য আমি সেলাই সেন্টারে কাজ করি। পিতা আহসানুল কবিরও সংসার চালাতে এবং সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে ট্রেগার গাড়ি চালানোর পাশাপাশি অন্য কাজও করেন।”
নিহতের নানা হামিদুল হক বলেন, তার নাতি ছেলে বোরহানুল মেধাবি ছাত্র ছিল। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে এ প্লাসসহ বৃত্তি লাভ করে। এসএসসি পাশ করার পর বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে ভর্তি হয় মনিরামপুর সরকারি কলেজে। নিজের খরচ জোগাতে টিউশনিও করতো আমার নাতি। জনগনের জান-মালের সেবক পুলিশ আমার নাতিকে মরোণাপূর্ণ ও রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে না পাঠিয়ে হাতকড়া মেরে পুলিশ ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখার বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, গত শনিবার মোটরসাইকেল ছিনতাইকারি অপবাদ দিয়ে কলেজ ছাত্র বোরহানূল কবীরকে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উপজেলার খালিয়া গ্রামে রাজগঞ্জ-হেলাঞ্চি সড়কের উপর ফেলে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে হাসপাতালে না পাঠিয়ে হাতকড়া পরিয়ে রাজগঞ্জ পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রে এনে প্রায় আড়াই ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। এমন খবর পেয়ে নিহতের মা রঞ্জু বেগম তার দুই দেবরকে সাথে নিয়ে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যান। সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিতে চাইলেও উদ্ধারকারি রাজগঞ্জ পুলিশি তদন্ত কেন্দ্রের এসআই তপন কুমার নন্দী তাদের হাতে তুলে দেয়নি। বোরহানুল মানসিক রোগি এবং তার চিকিৎসা চলছে বলে ছেলেকে হাসপাতালে নিতে চাইলে তপন কুমার নন্দী চিকিৎসার প্রমান চান। দীর্ঘক্ষণ সেখানে তাকে আটক রাখার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বোরাহানুলের মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলে স্বজনদের অভিযোগ।
পুলিশের গাফিলতিতে মেধাবী কলেজ ছাত্র বোরহানুল কবীরের মৃত্যু ঘটেছে নিহতের পরিবারের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তপন কুমার নন্দী তা অস্বীকার করে বলেন, একটু দেরীতে হলেও রক্তাক্ত ওই কলেজ ছাত্রকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই