যশোরের ঝিকরগাছায় এ বছর শীতকালীন সবজি মটরশুটি আবাদে বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামে এবার সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। এখানকার শতাধিক কৃষক প্রায় ৫’শ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন মটরশুটি। বাজারের কাঙ্খিত মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা তাই দারুণ খুশি।
মটরশুটি আহরণের শুরুর দিকে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ৬/৭ হাজার টাকা। খুচরা প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। এখন ভরা মৌসুম। তাই পর্যাপ্ত আমদানি হওয়ায় বাজারমূল্যে ধস নেমেছে। এমনটাই দাবি করছেন কৃষকেরা। সরেজমিন লক্ষ্মীপুর উত্তরপাড়া মাঠ জুড়ে কেবলই মটরশুটির একের পর এক ক্ষেত চোখে পড়ার মতো।
এলাকার কৃষক তরিকুল ইসলাম বাবু ও তার সহোদর ফারুক হোসেন জানান, তারা ৯ বিঘা জমিতে এ বছর মটরশুটির আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন।
কৃষক রিপন মিয়া ৩ বিঘা, আবুল হোসেন ৩ বিঘা, বাবুল মিয়া ৪ বিঘা, আলম, খোকন, সিরাজ, মেহেদী, টিটো, আলাল হক, সবুজ, ইব্রাহীম, করিম মিয়াসহ শতাধিক কৃষক মটরশুটির আবাদ করেছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ফসল উঠতিমুখী কাঙ্খিত বাজারমূল্য পাওয়ায় লাভের টাকা আগেই ঘরে তুলেছেন। মটরশুটি মূলত কৃষকের কাছে বিনাখরচের আবাদ বলে পরিচিত। সেচ, সার ও কীটনাশক খরচ নেই বললেই চলে। প্রতি বিঘা জমিতে মটরশুটি আবাদে কৃষকের খরচ হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। ১ বিঘা জমিতে আবাদকৃত মটরশুটি বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ মটরশুটি বাজারে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা। পক্ষকাল আগেও প্রতিমন মটরশুটির দাম ছিলো ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা। মাঠ থেকে কাঁচা মটরশুটি তুলতে মহিলারা জনের দাম হিসেবে পেয়ে থাকে কেজি প্রতি ১০ টাকা। পাইকারি মার্কেটে বিক্রি প্রতি কেজি ৪০/৫০ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০/৬০ টাকা। এ থেকে গ্রামের বেকার অনেক মহিলাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন জানান, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে আবাদ করে আড়াই বিঘা জমির মটরশুটি বিক্রি করেছেন ৪০ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১০ কাঠা জমিতে ১০ হাজার টাকার মটরশুটি বিক্রির অপেক্ষায় আছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কৃষকদের মতে, আশ্বিন মাসের প্রথমার্ধের মটরশুটির বীজবপণ উপযুক্ত সময়। সাড়ে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে মটরশুটি পুরোমাত্রায় ফলন আসে এবং আহরণ করা যায়। দোঁআশ মাটিতে মটরশুটির উৎপাদন ভালো হয়। রসনাবিলাসে অভিজাত পরিবারের নানা খাদ্য বাড়তি উপাদেয় ও তৃপ্তিদায়ক করতে মটরশুটির বহুমাত্রিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিরিয়ানি পোলাও ছাড়াও মাছ মাংশসহ সাধারণ তরিতরকারীতেও মটরশুটি ছাড়া যেনো অপূর্ণতায় থেকে যায়। তাই শহরের নামিদামী হোটেল রেঁস্তরাসহ বিয়ে-সাদির আয়োজনে রান্না-বান্নায় মটরশুটি ব্যবহার যেনো এক অপরিহার্য অনুসঙ্গ। মটরশুটির কাঁচা ফল সুস্বাদু ও মুখোরোচক। পুষ্টিগুণেও ভরপুর। তাই, মটরশুটির চাহিদার সাথে বাড়ছে আবাদেরও ব্যাপকতা।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, এ বছর মটরশুটি চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২২০ হেক্টর জমির, সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ২৮০ হেক্টর জমিতে। প্রতি বিঘায় উৎপাদন হয়েছে ২.৫ মেট্রিকটন থেকে ৩.৫ মেট্রিকটন। যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক বেশি।
খুলনা গেজেট/এনএম