পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হওয়া সত্ত্বেও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি করতে দেয়া হয় না। এখানে মাত্র ৭৭ ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন রয়েছে। উচ্চকরযুক্ত পণ্য আমদানি করা যায় না। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের পাশাপাশি ব্যাংকে এলসি জটিলতার কারণে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পণ্য আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দুই লাখ টন কম হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সংকটের কারণেও আমদানি অব্যাহত কমছে এই বন্দরে।
আমদানিকারক ও ব্যবসায়িরা বলছেন, শুধু ডলার সংকট বা এলসি জটিলতা নয়, বৈষম্যের কারণেও ভোমরা বন্দরে আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে অবকাঠামোগত কিছুটা উন্নয়ন হলেও এখনো পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধান পাচ্ছেন ব্যবসায়িরা। পণ্য আমদানিতে রয়েছে চরম বৈষম্য। এ বন্দর দিয়ে চাল, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, বিভিন্ন প্রকার ফল, পাথরসহ মাত্র ৭৭ প্রকার পণ্য আমদানি হয়। ভোমরা থেকে ভারতের কোলকাতার দূরত্ব অনেক কম হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র পণ্য আমদানিতে লিমিটেশনের কারণে অনেক ব্যবসায়ি এই বন্দর ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে ক্রমইে পণ্য আমদানি কমছে এই বন্দর দিয়ে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৪ টন। আমদানীকৃত এসব পণ্যের দাম ৩ হাজার ৯৯৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যেখান থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩০০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৩ টন, যার মূল্য ছিল ৫ হাজার ৭৮৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সেখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪৯৮ কোটি ৫ লাখ টাকা। সে হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে পণ্য আমদানি কমেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭২৯ টন।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মাকসুদ খান বলেন, ভোমরা বন্দরে পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম আমদানিতে চরম বৈষম্য। পূর্ণাঙ্গ বন্দর হওয়া সত্ত্বেও ভোমরা বন্দরে বৈধ সব ধরনের পণ্য আমদানি করতে দেয়া হয় না। এখানে ৭৭ ধরনের পণ্য আমদানির অনুমোদন রয়েছে। উচ্চকরযুক্ত পণ্য আমদানি করা যায় না। যেসব পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে, সেগুলোর জন্যও পর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। আমাদের পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরে পণ্য আমদানিতে যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, ভোমরা বন্দরে তা দেয়া হয় না। পচনশীল পণ্য আমদানিতে দেশের অন্যান্য বন্দরে কিছু ছাড় পান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ভোমরা বন্দরে কোনো ছাড় দেয়া হয় না। ফলে ব্যবসায়িরা দিন দিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এ বন্দর থেকে।
সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, ‘পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে দেশের অন্য সব বন্দরের চেয়ে অনেক সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। অথচ এ বন্দর যাত্রার পর থেকে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। কোনো প্রকার যানজট বা পণ্যজট হয় না। তার পরও এ বন্দরে সব ধরনের পণ্য আমদানি করতে পারেন না ব্যবসায়িরা। ফলে সরকারও রাজস্ব কম পাচ্ছে, আমদানিও কমে যাচ্ছে। তিনি বন্দরের এধরনের বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানান।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের উপ সহকারী কমিশনার নেয়ামুল হাসান বলেন, বন্দরে পণ্য আমদানি কম-বেশি হয় ব্যবসায়িদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে। ব্যবসায়িরা পণ্য আমদানিতে যেমন এলসি খুলবেন, তেমন পণ্য আসবে। এখানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কিছুই করার থাকে না। তবে ব্যবসায়িরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই পণ্য আমদানি-রফতানি করতে পারেন, সে ব্যাপারে কাস্টমসের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু এখানে কোনো প্রকার অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে না।