সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের কাছ থেকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভ্রমণ খাতে প্রায় ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এসময় দু’দেশে যাতায়াত করেছে সাড়ে তিন লাখের বেশি পাসপোর্ট যাত্রী।
ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ভারতের বাণিজ্য শহর কলিকাতার সাথে সাতক্ষীরা জেলার ভোমরার দূরত্ব কম হওয়ায় যাত্রীরা ভোমরা-ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াত করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষাসহ স্বজনদের সাথে দেখা করতে ভারত যাচ্ছেন অনেকে। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ পথ দিয়ে তিন লাখ ৬১ হাজার ৯৩৭ জন যাত্রী পারাপার করেছে। এর মধ্যে এক লাখ ৯৮ হাজার ২৭৫ জন যাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেছে। একই সময়ে ভারতে থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৬২ জন যাত্রী। এ অর্থ বছরে ভ্রমণ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে নয় কোটি ৮০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।
সূত্র আরও জানায়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে ২ লাখ ৫ হাজার ৩৭৬ জন যাত্রী। একই অর্থ বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ আসে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৫২ জন যাত্রী। এ অর্থ বছরে ভ্রমণ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ১০ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। পরবর্তী ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন যাত্রী। ভারত থেকে বাংলাদেশ আসে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৬৯ জন যাত্রী। করোনার কারণে এ অর্থ বছরের ১৩ মার্চ ভারত সরকার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সরকারের রাজস্ব কমে যায় প্রায় ৩ কোটি টাকা। এ অর্থ বছরে সরকার ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়। করোনার প্রভাবে গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ভোমরা স্থলবন্দরে যাত্রী যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় কোন রাজস্ব আদায় করতে পারেনি সরকার।
তবে, এ সময়ে ভারতে আটকে থাকা ৬৭৩ জন যাত্রীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এই স্থল বন্দর দিয়ে ৪৬ হাজার ৫০০ জন যাত্রী গমনাগমন করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে ২৪ হাজার ৩৭৯ জন যাত্রী এবং ভারত থেকে বাংলাদেশ আসে ২২ হাজার ১২১ জন যাত্রী। এ অর্থ বছরে ভ্রমণ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আসে এক কোটি ২১ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্রমণ কর ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ১ জুলাই শনিবার থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়াও ১২ বছরের নিচের যাত্রীদের জন্য ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৫ বছরের নিচের, অন্ধ, ক্যান্সার আক্রান্ত ও পঙ্গু যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোন ভ্রমণ করের প্রয়োজন হবে না। পূর্বে ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর পরিশোধ করে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারতেন।
ভোমরা পুলিশ ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসআই মোঃ মাজরিহা হুসাইন বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে ভোমরা পুলিশ ইমিগ্রেশনের ৬টি ডেস্কে নিয়মিত কাজ করছেন অফিসাররা। এর মধ্য ৩টি বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের যাত্রী এবং ৩টি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায় যে, সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা সীমান্তে অবস্থিত ভোমরা পুলিশ ইমিগ্রেশনে একটি আধুনিক ভবনে যাত্রীদের ভারতে গমনাগমন সংক্রান্ত কার্যাবলী সম্পাদন করা হয়। সেখানে উপস্থিত দেশী-বিদেশী যাত্রীগণ পুলিশের আন্তরিক ব্যবহারসহ দ্রুত ইমিগ্রেশন সেবার প্রশংসা করেন।
ভোমরা স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা-ভোমরা রোডের সংস্কার ও করোনার বন্ধের পর পুনরায় এই বন্দর চালু হওয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী পারাপার হচ্ছে। যার ফলে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব আদায় হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ভ্রমণ কর ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ১২ বছরের নিচের যাত্রীদের জন্য ৫০০ টাকা এবং ৫ বছরের নিচের, অন্ধ, ক্যান্সার আক্রান্ত ও পঙ্গু যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোন ভ্রমণ করের প্রয়োজন হবে না।
খুলনা গেজেট/এনএম