খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

আ’লীগের ভোট জালিয়াতির সাম্রাজ্য তছনছ, ২৪ ঘণ্টায় ১৮৭৬ জনপ্রতিনিধি অপসারণ

গেজেট ডেস্ক

পদত্যাগের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সাম্রাজ্য তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি ও একতরফা ভোটে নির্বাচিত হওয়া ১ হাজার ৮৭৬ জন জনপ্রতিনিধিকে একযোগে অপসারণ করা হয়েছে গতকাল সোমবার। এর মাধ্যমে ভোট ডাকাতির একটি কালো অধ্যায়ের সমাপ্ত হলো বলে অনেকে মনে করছেন।

জানা গেছে, আগে সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হতো। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৫ সালে আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। শুরুর দিকে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তবে সেখানে ব্যাপক কারচুপি, দখলের অভিযোগ ওঠে। পরে ক্রমে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন শুরু করে।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন কোনো নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি। ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ এ বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়নি। এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা কর্মী জয়ী হন। সিটি করপোরেশনের ভোটেও একই চিত্র দেখা গেছে। কার্যত জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রায় সব শীর্ষ পদই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে ছিল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুথানের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। তখন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে যান। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে বিকল্প ব্যবস্থা করে সরকার। যেমন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এরপর অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন সংশোধন করে মেয়র-চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ তৈরি করে সরকার।

যারা অপসারিত হলেন

১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সারা দেশের সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র রয়েছেন।

অপসারণ করা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ পৃথক প্রজ্ঞাপনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। গত শনিবার বিশেষ পরিস্থিতিতে এসব জনপ্রতিনিধি অপসারণের সুযোগ রেখে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল।

 

গত শুক্রবার ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়। ওই সংশোধনীর ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোয় প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।

যেসব সিটি মেয়র অপসারিত হলেন

১২টি সিটি করপোরেশনের যেসব মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপস, চট্টগ্রামের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক, সিলেটে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, বরিশালে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, নারায়ণগঞ্জে সেলিনা হায়াৎ আইভী, ময়মনসিংহে ইকরামুল হক, গাজীপুরে জায়েদা খাতুন, রংপুরে মো. মোস্তাফিজার রহমান ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র তাহসীন বাহার। এর মধ্যে রংপুরের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান জাতীয় পার্টির নেতা। আর গাজীপুরে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। বাকি সবাই আওয়ামী লীগের নেতা বা নেতাদের স্বজন।

অপসারণের পর ১২টি সিটি করপোরেশনেই প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে অতিরিক্ত সচিব ও সমমর্যাদার চার কর্মকর্তাকে প্রশাসক করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বিভাগীয় কমিশনারদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মেয়রদের অপসারণ করা হলেও কাউন্সিলররা থাকছেন কি না, বিষয়টি স্পষ্ট নয়। বাসস জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সিটি করপোরেশনে মেয়রদের অপসারণ করা হলেও কাউন্সিলরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রশাসক থাকলে কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করবেন কি করবে না, সেটা এখন তাঁদের ব্যাপার। মূল কথা হচ্ছে, মেয়র ও চেয়ারম্যানের জায়গায় প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করব। এখানে মার মার কাট কাটের কোনো বিষয় নেই। এটি সমগ্র স্থানীয় সরকারকে পরিচ্ছন্ন করার একটি প্রচেষ্টা।’

এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের পৃথক প্রজ্ঞাপনে দেশের ৪৯৩টি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়। একটি উপজেলার চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় পদটি শূন্য হয়। তাঁদের জায়গায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে উপজেলা পরিষদের সব (৪৯৪টি) ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদেরও অপসারণ করা হয়েছে। আর মৃত্যুর কারণে নাটোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়েছে। তাঁদের জায়গায় ৮টি জেলা পরিষদের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) এবং ৫৩টি জেলা পরিষদে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব কর্মকর্তা নিজ নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবেন। উল্লেখ, তিন পাব৴ত্য জেলায় ভিন্ন নিয়মে চলে। তাই সেগুলোতে পরিবর্তন হয়নি।

সব পৌরসভার (৩২৩টি) মেয়রদেরও অপসারণ করা হয়েছে। সাতটি পৌরসভায় আগে থেকেই প্রশাসক ছিলেন। তাঁদের সরিয়ে এবার সব মিলিয়ে ৩৩০টি পৌরসভায় নতুন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জেলায় কর্মরত স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!