খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ আজ

ভৈরব সেতুর অগ্রগতি দেখে হতাশ অর্থ উপদেষ্টা

একরামুল হোসেন লিপু

কাজ শুরুর তিন বছর পর খুলনার ভৈরব সেতু নির্মাণে নকশা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান । তিনি বলেছেন, ভৈরব সেতুর বর্তমান নকশায় কম গতির যানবাহন চলাচলে করলে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ব্রিজে পিলার স্থাপনে নদীর ন্যাবতা সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সড়ক বিভাগ বলছে তারা স্টিল স্ট্রাকচারে যাবে, না কি কংক্রিট স্ট্রাকচারে যাবে; সেই বিষয়টি এখনও বিবেচনায় আছে। স্টিল ব্রিজে গেলে নদীর নাব্যতা বেশি দিন রাখা সম্ভব হবে। স্টিল ও কংক্রিট স্ট্রাকচারে খরচের তেমন কোন পার্থক্য নেই। এছাড়া অতিরিক্ত সময় বা অতিরিক্ত ব্যয় কিছু হবে না। সামান্য হেরফের হতে পারে।

সোমবার (১৩ মে) দুপুরে ভৈরব সেতুর দিঘলিয়া প্রান্ত পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থ উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের প্রাণের ব্যথাটা আপনারা দূর করেন। আমাদের প্রাণের একটা দুঃখ আছে, হবে হবে দেখি, ব্রিজটা হচ্ছে না। কবে আমরা ব্রিজের উপর দিয়ে যাবো?

তিনি  আরো বলেন, ব্রিজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা নৈতিক একটা প্রতিশ্রুতি দেন, কবে নাগাদ ব্রিজের কাজ শেষ করতে পারবেন? জবাবে তারা বললেন ১৪ মাস কি ১৬ মাস সময় লাগতে পারে। ‘ রোডস এন্ড হাইওয়ের কথা শুনে মনে হলো- বিবেচনা প্রথম থেকে যদি করতো।’

এর আগে তিনি সেতুরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ)’র বেজ ক্যাম্পে সেতুর বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) আয়োজিত সেতুর দিঘলিয়া প্রান্ত পরিদর্শন শেষে পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) ‘র খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ, দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ, সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) ‘র ডাইরেক্টর সাখাওয়াত হোসেন, সওজ ‘র এডি প্রসেনজিৎ পাল, ফেরী বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজম শেখ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান, ফয়সাল শেখ, মোঃ হাবিব মিয়া, এসডি গোপেশ, ভৈরব সেতু প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী এস এম নাজমুল প্রমুখ।

২০২১ সালের ২৪ মে  জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত এবং আকাঙ্ক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় দফা মেয়াদে সময় বাড়ানোর পরও চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তৃতীয় দফায় আরো ২ বছর সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। খুলনাবাসীর প্রশ্ন কবে নাগাদ শেষ হবে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ?

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই সওজ ‘র খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার ৬ মাস পর ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর কি দিঘলিয়া প্রান্তে সরকারি খাস জমির উপর ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিং এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ।

বর্তমান নকশা অনুযায়ী ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এর মাধ্যমে সেতুর শহরাংশে কুলিবাগান হতে রেলিগেট ভৈরব নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে। সেতুর রেলিগেট প্রান্তে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং এবং সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে নদী পার হতে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এই দুই পিলারের উপর স্টিলের সেতু বসার কথা।

প্রসঙ্গত, ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকী টাকা সেতু সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে।

খুলনা গেজেট/কেডি/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!