২০২১ সালের ২৪ মে খুলনাবাসীর দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত এবং প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু পর থমকে যায় এর নির্মাণকাজ। ১৫ মাসে কাজের অগ্রগতি খুবই হতাশাব্যঞ্জক। কাজের অগ্রগতি বলতে সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়ার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর ২৪ এবং ২৫ নং পিলারের কাজ চলমান এবং সেতুর পশ্চিম সাইড নদীর তীর সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর ১৩ এবং ১৪ নং পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। যা সেতুর মোট কাজের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
সেতুর কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ার কারণ হিসেবে শুরু থেকে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) এর কর্তা ব্যক্তিরা ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতাকে দায়ী করে আসছে।
সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার ৯ মাস পর চলতি বছরের ৬ মার্চ খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে সেতুর দিঘলিয়া অংশের নগরঘরঘাট ফেরিঘাট থেকে উপজেলা সদর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৪শ’ জমির মালিকদের ধারা ৪ এর( ১) উপধারা মোতাবেক আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয় তফশিলে বর্নিত সম্পত্তি খুলনা ‘সড়ক বিভাগাধীন (দিঘলিয়া) রেলিগেট -আড়ুয়া -গাজীরহাট-তেরখাদা সড়কের ১কিঃমিঃ- এ ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য জনপ্রয়োজন ও জনস্বার্থমূলক উদ্দেশ্যে প্রয়োজন সেহেতু এক্ষণে স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নং আইন) এর ৪ ধারার অধীনে এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য নোটিশ জারি করা হইল যে, বর্নিত সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব করা হয়।
এ দিকে ৪ ধারা নোটিশ দেওয়ার প্রায় ৬ মাস পর সকল জল্পন কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে আজ মঙ্গবার (৩০ আগস্ট) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ (সাধারণ) শাখা থেকে সেতুর দিঘলিয়া অংশে ভূমির মালিকদের ৮ ধারার (৩) (ক) উপ-ধারা মোতাবেক ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশ জারির নং ৪২৮৮(৭)। কেস নং ৫/২০২১-২২। জেলা প্রশাসকের পক্ষে নোটিশে স্বাক্ষর করেন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন।
দিঘলিয়া উপজেলা চৌরাস্তা মোড়ে ৮ ধারা নোটিশ প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলী রেজা বাচা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রসেস সার্ভেয়ার মোঃ সরোয়ার হোসেন, মোঃ এসকেন্দার, স্থানীয় শেখ আনছার আলী, মোল্যা শাসছুর আলী, আশরাফুজ্জামান মিঠু বিশ্বাস প্রমুখ।
৮ ধারা নোটিশ প্রদানের মাধ্যমে সেতুর পূর্ব সাইড অর্থাৎ দিঘলিয়া অংশে জমি অধিগ্রহণে আর কোন বাঁধা রইল না বলে জেলা প্রশাসক অফিস সূত্রে জানা জানা যায়।
সূত্রমতে, আগামীকাল বুধবার (৩১ আগস্ট) আনুষ্ঠানিকভাবে অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (এলএ) শাহানাজ পারভীন অধিগ্রহণকৃত জমির দলিল সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে হস্তান্তর করবে।
সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ নাজমুল খুলনা গেজেটকে বলেন, সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে সসম্পন্ন করার সকল প্রস্তুতি থাকা সত্বেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে ধীরগতিতে কাজ চলছিলো। আগামীকাল অধিগ্রহণের কাগজপত্র বুঝে পাওয়ার পর কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি বৃদ্ধি পাবে।
২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২৬ নভেম্বর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬’শ ১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। গত সাড়ে ১৫ মাসে ৩ পিলারের ১০ টি করে ৩০ টি টেস্ট পাইলিং ছাড়া। অন্য কোন কাজ হয়নি। কাজের অগ্রগতি ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর উপ-সচিব ফাহমিদা হক খান ভৈরব সেতুর কাজের এ হতাশা ব্যঞ্জক অগ্রগতির কথা জানতে পেরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।