ইউটিউব দেখে ভেজাল মধু তৈরির কৌশল আয়ত্ব করেন যুবলীগ নেতা আবু সালেহ খলিফা (৪০)। দীর্ঘদিন ধরে চিনি, চায়ের লিকার এবং কেমিক্যাল মিশিয়ে গোপনে মধু তৈরি করে বিক্রি করে আসছিলেন। অবশেষে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। ভেজাল মধু কারবারি আবু সালেহ খলিফা বগী ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের সুন্দরবনসংলগ্ন বগী গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ভেজাল মধু তৈরির সময় আবু সালেহকে আটক করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য, প্রকৃত মধু ব্যবসায়ী ও মৌয়ালরা। ওই রাতে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আজ রবিবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে।
সুন্দরবনের মৌয়াল হাবিব পেয়াদা ও আনোয়ার পেয়াদা জানান, আমরা ১০-১২ বছর ধরে সুন্দরবন থেকে মধু আহরণ করি।
কিন্তু আমাদের খাঁটি মধুর দাম বেশি হওয়ায় কেউ কিনতে চায় না। কয়েক মন মধু আমাদের ঘরে পড়ে আছে। এই ভেজাল মধুর কারণে আমরা আসল মধু বিক্রি করতে পারছি না।
মধু ব্যবসায়ী মাহাবুব তালুকদার বলেন, ‘এক কেজি খাঁটি মধু এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব না।
সেখানে আবু সালেহ-এর ভেজাল মধু বিক্রি হয় ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়। আমরা প্রায় দুই বছর ধরে এই ভেজাল মধু ধরার জন্য অনুসন্ধান চালিয়েছি। অবশেষে মেম্বারের সহায়তায় এই প্রতারককে ধরতে সক্ষম হই।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, ‘ভেজাল মধুর কারবারি আবু সালেহ বগী ওয়ার্ড যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। অনেক চেষ্টার পর ভেজাল মধু তৈরির সময় তাকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।
তার কারণে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর সুনাম নষ্ট হচ্ছে। তার কারখানায় আধা বস্তা চিনি, প্রায় ২০ কেজি ভেজাল মধু ও বিভিন্ন সরঞ্জাম পাওয়া যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভেজাল মধুর দাপটে খাঁটি মধুর ব্যবসায়ী ও মৌয়ালরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু চিনি, চা পাতা আর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা মধু দামে কম হওয়ায় ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন পাইকারদের কাছে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামেও লাখ লাখ টাকার ভেজাল মধু চালান করছেন আবু সালেহ। তার জরিমানা ছাড়াও আরো কঠোর শাস্তি হওয়া উচিৎ ছিল।’
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভেজাল মধু তৈরির অপরাধে কারবারি আবু সালেহ খলিফাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পরে জরিমানার টাকা পরিশোধ এবং পরবর্তীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার অঙ্গীকার করলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। জব্দকৃত ভেজাল মধু পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ এএজে