দিনেও নিজ বলে দাঁড়িয়ে ছিল চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শাহাপুর ও ভুলটিয়া ব্লকের বিভাগীয় সিড স্টোর, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় কাম কোয়ার্টারের সরকারি ভবনটি। রাতের আঁধারে হঠাৎ ভবনটি ভেঙে পড়ে মাটিতে!
চুয়াডাঙ্গার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কৃষি বিভাগের লুটিয়ে পড়া ওই ভবনের সম্পত্তির দাবি তুলে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ও কৃষি বিভাগ।
২৫ কোটি টাকার ওই সম্পত্তি দুই পক্ষই নিজেদের বলে দাবি করছে। যদিও ইতোমধ্যে ভবন ভেঙে ফেলার অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করেছে কৃষি বিভাগ। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিষয়গুলো অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাতে ভেঙে পড়ে ওই ভবনটি। রাতে একটি ভবন ভেঙে পড়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত দিচ্ছেন দুই দপ্তরের প্রধানরা।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর বলছেন, বাজারের কাছে হওয়ায় ওই জমির দাম বেশি। একটি প্রভাবশালী মহল জমি দখল করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন তৈরির জন্য বেশ কিছু দিন ধরে চেষ্টা করে আসছে। রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর দিয়ে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে হয়তো তারা দখলের চেষ্টা করবেন।
অপরদিকে কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হাসানুজ্জামান মানিক বলছেন, কৃষি বিভাগের ভবনটি ছিল পরিত্যক্ত কোয়ার্টার, যেখানে কেউ বাস করেন না। একটি কক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আছে। বাকি কক্ষের দরজা-জানালা বলতে কিছু নেই। লোকজন সেখানে শৌচাগার হিসেবে করতো। দুর্গন্ধে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে বসা যেতো না। ভবনটি অপসারণ করতে কৃষি সম্পসারণ বিভাগের কর্মকর্তাদের বারবার অনুরোধ করার পরও কোনো লাভ হয়নি। মঙ্গলবার রাতে ভবনটি এমনিতেই ভেঙে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে কুতুবপুর ইউপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বাবু সুধীন্দ্র কুমার ইউনিয়ন পরিষদের জমি থেকে ৫০ শতাংশ জমি শস্যবীজ ভাণ্ডার তৈরির জন্য কৃষি বিভাগকে দান করেছিলেন। এরপর থেকেই জায়গাটি কৃষি বিভাগ ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু রাতের আঁধারে ভবন ভেঙে পড়া ও নতুন করে জায়গা দখল করা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে কৃষি বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে।
স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে থেকেই ওই জমিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের (সাবেক ব্লক সুপারভাইজার) দপ্তর কাম বাসভবন ও ভাণ্ডার রয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আগে পরিবার নিয়ে পাকা ভবনটিতে বসবাস করতেন। কয়েক মাস ধরে সেটিকে দপ্তর হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছিল। যে কাজের জন্য জমিটি দান করা হয়েছিল, সে কাজে ব্যবহার হতো না।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জামাত আলীর যুক্তি, জমিটি দান করার সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা ছিল, শস্যভাণ্ডার হলে কৃষি বিভাগ জমি পাবে, নাহলে পরিষদকে ফেরত দেবে। দীর্ঘদিনেও সেখানে শস্যভাণ্ডার হয়নি। তাই জমি ফেরত পেতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে।
কৃষি বিভাগও দাবি করেছে, দীর্ঘদিন ধরে জমি খাজনা পরিশোধ করে আসছেন তারা। এখন তো যে কেউ দাবি করলে, জায়গা তার হয়ে যাবে না। কাগজপত্র নিয়ে আইনি লড়াইয়ে যেতে প্রস্তুত কৃষি কর্মকর্তারাও।
ভবনটি ভেঙে পড়ায় অর্ধলাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া বলেন, ভবনটি ভেঙে পড়েছে নাকি ভাঙা হয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। একটি সরকারি ভবন এভাবে হঠাৎ কেন ভেঙে যাবে? তার প্রকৃত কারণ জানা দরকার। আর সম্পত্তি নিয়ে দুই পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি সরকারের আয়ত্ত্বেই থাকবে।
দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্বে সরকারি সম্পত্তিটি যেন বেহাত না হয়, সেই দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।