পানির দাম আরেক দফা বাড়ানোর বিষয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, পানির উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে অনেক ব্যবধান। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি ১ হাজার লিটার পানিতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১০ টাকা। তিনি বলেন, সরকারের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্থা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।
আজ বুধবার ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান এসব কথা বলেন। গত সোমবার ওয়াসার বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোতে ‘পানির দাম আরও বাড়াতে চায় ওয়াসা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকর্মীদের ওয়াসা ভবনে আমন্ত্রণ জানায়।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বর্তমান মূল্যের চেয়ে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বাড়াতে চায়। তবে তিনি পুরো বিষয়টিকে পানির দাম বাড়ানোর বদলে ‘উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বাজারমূল্যের সমন্বয়’ বলে উল্লেখ করেন।
তাকসিম এ খান বলেন, সরকার পানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। সেটা কতটা কমানো যায়, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পানির দাম প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়, ভবিষ্যতেও হবে। ওয়াসা বিদেশি ঋণে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এসব ঋণের গ্যারান্টার (জামানতকারী) বাংলাদেশ সরকার। এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধে ওয়াসাকে এখন বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সরকারের উচ্চ মহল থেকে পানির দামের ভর্তুকির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানোর নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পানির দাম সহনীয় রাখতে সব চেষ্টাই করা হচ্ছে। কিন্তু একটা প্রতিষ্ঠান নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে চলতে পারে না। ভিক্ষা করে কোনো সংস্থা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। তাই ভর্তুকির পরিমাণ কমাতে পানির দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওয়াসার বোর্ড সভা সূত্রে জানা যায়, বর্তমান দামের চেয়ে পানির দাম ৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী আবাসিকে নতুন দাম দাঁড়াবে ২১ টাকা। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম বর্তমানে ৪২ টাকা। ওয়াসার প্রস্তাব অনুযায়ী, বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম দাঁড়াবে ৫৫ টাকা।
আগামী ১ জুলাই থেকে পানির নতুন দাম কার্যকর করতে চায় ঢাকা ওয়াসা। করোনা মহামারির মধ্যে গত দুই বছরে দুবার আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, করোনায় বেকারত্ব বেড়েছে, লোকজনের আয় কমেছে। এর মধ্যে আরেক দফা পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে অমানবিক।
খুলনা গেজেট/এএ