খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ ফাল্গুন, ১৪৩১ | ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি-ধর্ষণের ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা
  অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আজ, ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে শহীদ মিনার

ভাষা আন্দোলনে ডুমুরিয়া

কাজী মোতাহার রহমান

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ডুমুরিয়ার। কমিউনিস্ট নেতাদের কাছে লাল ডুমুরিয়া নামে এক সময় পরিচিত ছিল। ষোল শতকে মুসলিম শাসক ও ইসলাম ধর্মের প্রবক্তা আরশনগরে সমাহিত শাহ আফজালের ধর্মীয় আন্দোলন, বর্গী আন্দোলন, জলদস্যু দমন ও জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এখানকার ভূমিকা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৪৮ ও ১৯৫২-র জন্য। পাকিস্তান শাসনের প্রথম দিকে এখানে তিনটি রাজনৈতিক ধারা দিল। রাজনীতির প্রথম ধারাটি মুসলিম লীগের, দ্বিতীয় ধারাটি কংগ্রেস, তৃতীয় ধারাটি কমিড়ুনিস্ট আদোলনের। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বে সম্পৃক্ত হন কমিউনিস্ট নেতা রুপসার বিষ্নু চ্যাটার্জী ও টোলনা গ্রামের বামপস্থী এ্যাড. আবদুল জব্বার। তিনি খুলনার প্রগতিশীল রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর হাতের খুন হন। তার লাশের সংন্ধান পাওয়া যায় নি। ভাষা আন্দোলনে নীরব ভুমিকা পালন করে মুসলিম লীগপন্থীরা। তখনকার দিনে মুসলিম লীগের সাথে সম্পৃক্তরা হচ্ছেন, ফজলুর রহমান মল্লিক, ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম হামিদার রহমান গোল্দার, ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম হাসান শাহদাত হোসেন ফকির ও নাজির হোসেন খান।

এ অংশের আব্দুল আহাদ খান ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি নীরব ভুমিকা পালন করেন (শেখ আব্দুল জলীল রচিত ডুমুরিয়ার ইতিহাস)। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে হরতাল আহবান করে। তখনকার দিনে তাৎক্ষণিক সংবাদ পাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। লোকমুখে সংবাদ পৌঁছাত। ২১ ফেব্রুয়ারির হরতাল সফল করার লক্ষে ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা শহরের কাঁঠালতলা মোড়ে (আজকের নূর অপটিক্যাল) আজাদ গ্রন্থালয়ে খুলনাস্থ সংগ্রাম পরিষদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে খ্যাতিমান আইনজীবী এএইচ দেলদার আহমেদ, ঐতিহাসিক এ্যাড. এএফএম আব্দুল জলীল, এম এ গফুর, মালিক আতাহার উদ্দিন, বেগম মাজেদা আলী, ডুমুরিয়ার টোলনা গ্রামের এ্যাড. আব্দুল জব্বার, আন্দুলিয়ার এস এম আবু বাকার (পরবর্তীতে উপ-সচিব), বান্দার রতিকান্ত বিশ্বাস, আরাজী ডুমুরিয়ার শেখ জোবায়েদ আলী, উলার আবুবকার সরদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে টোলনা গ্রামের এ্যাড, আব্দুল জব্বার কে আহবায়ক করে ডুমুরিয়া থানার সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুয়াযী ২০ ফেব্রুয়ারি ডুমুরিয়ার মেঘনাদ হল (ডুমুরিয়া হাইস্কুলের ছাত্রাবাস), মিকশিমিল হাইস্কুল এবং রংপুর হাইস্কুল সংলগ্ন কালীবাড়ীর সম্মুখে তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মিকশিমিল হাইস্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নলিনী রঞ্জন যোদ নেপথ্যে ছিলেন। এ স্কুল সংলগ্ন আমতলার বৈঠকের নেতৃত্ব দেন আন্দুলিয়ার এস এম আবু বাকার, মধুগ্রামের বৈঠকের নেতৃত্ব দেন অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এএফএম আব্দুস সালাম এবং রংপুর কালিবাড়ী হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস- এর অনুপ্রেরণায় কাজী বাড়ীর বৈঠকে নেতৃত্ব দেন রুপরামপুর গ্রামের খগেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও রংপুরের নারায়ন চন্দ্র সরকার। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে উল্লিখিত তিন স্কুলে ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই’ শীর্ষক পোষ্টার সাঁটানো হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ডুমুরিয়া, রংপুর ও মিকশিমিল হাইস্কুলের ছাত্ররা কালো ব্যাজ ধারণ করে। আজকের ডুমুরিয়া হাইস্কুলের ছাত্রাবাস সেদিন মেঘনাথ হলে এক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!