খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ৬ষ্ঠ বছরে পদার্পণে খুলনা গেজেট’র সকল পাঠক, লেখক, সংবাদকর্মী, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে আন্ত‌রিক শুভেচ্ছা

ভালো ফলের পরও হোঁচট খাওয়ার ভয়

গেজেট ডেস্ক

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, যাতে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যাদের সবার মনোযোগ এখন ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নে। তবে আসনসংখ্যা সীমিত থাকায় ভালো কলেজ হিসেবে পরিচিত বিদ্যাপীঠগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবে না ১ লাখেরও বেশি জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী। আবার রয়েছে এর বিপরীত চিত্রও। এবারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও সারা দেশে ভর্তিযোগ্য আসন ফাঁকা থাকবে প্রায় ২০ লাখ।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক শাখার তথ্য বলছে, চলতি বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন জুলাই মাসের শেষে শুরু হবে। তিনটি মাইগ্রেশনসহ ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগে মোট দেড় মাসের মতো। সে হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি কলেজগুলোতে ক্লাস শুরু হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। এরই মধ্যে ভর্তি নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করেছে শিক্ষা বোর্ড। তার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল রোববার বৈঠকের সময় চাওয়া হয়েছে। এই বৈঠকে অংশ নেবেন শিক্ষা উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, কলেজ পরিদর্শক এবং রাজধানীর ৩৫টি বড় কলেজের অধ্যক্ষরা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে নীতিমালাটি অনুমোদন পেতে পারে। তার আগে এই ভর্তি প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহায়তার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সব বোর্ড থেকে শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা, আসনসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সিস্টেমে আপলোড দেবে।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘চলতি বছর ভর্তি নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আসতে পারে। এসব পরিবর্তনের জন্য সব বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকরা একটি বৈঠক করে খসড়া নীতিমালা করেছেন। এখন তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য নেওয়া হবে।’ কোটা প্রসঙ্গে তিনি জানান, সবকিছুই ঠিক হবে মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে।

এদিকে ভর্তি প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি সব দিক চূড়ান্তে যখন ব্যস্ত বোর্ড কর্তারা তখন অন্যদিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সব মনোযোগ কেন্দ্রীভূত ‘ভালো কলেজে’ ভর্তি হওয়ায়। কিন্তু বাস্তবতা দিচ্ছে ভিন্ন তথ্য। শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, সারা দেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমতি রয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২২ লাখের মতো। এর বাইরে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে আসন আছে প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার। এ ছাড়াও কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় ৯ লাখ আসন রয়েছে। সবমিলিয়ে আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ। এর বিপরীতে এবার পাস করেছে ১৩ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীও যদি ভর্তি হয়, তারপরও আসন শূন্য থাকবে প্রায় সাড়ে ২০ লাখ। সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকতে থাকা বেসরকারি কলেজগুলো। সংকট এতে আরও বাড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা অনেক বেসরকারি কলেজ পর্যাপ্ত ছাত্রছাত্রী না পাওয়ায় বন্ধ হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক রেজাউল হক কালবেলাকে বলেন, ‘গত বছর ২২০টি কলেজে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। যদিও পরে এর মধ্যে অনেক কলেজ ম্যানুয়াল পদ্ধতি কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে ইজ্জত রক্ষা করেছে। অতীতে প্রয়োজন নেই তারপরও কলেজ স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো নিয়ে এখন ভাবতে হচ্ছে।’

জিপিএ ৫ পেয়েও ভালো কলেজ পাবে না লাখো শিক্ষার্থী: চলতি বছর সব বোর্ড মিলিয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ ৫ পেয়েছে মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন শিক্ষার্থী, যা মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। তার মধ্যে ৯টি শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৮ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে ৫ হাজার ৭৮৪ জন এবং কারিগরি বোর্ডের রয়েছে ৪ হাজার ৪৬০ জন। যাদের সবাই চাইবে ভালো মানের কলেজে ভর্তি হতে। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হবে জিপিএ ৫-এর কাছাকাছি পাওয়া গ্রেডধারীও। অর্থাৎ জিপিএ ৪ থেকে জিপিএ ৪.৯০ পর্যন্ত পাওয়া ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭৮ জন, যা মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ২৩ শতাংশের বেশি। সর্বমোট ৫ লাখ ৮৮ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে নামবে ‘ভালো কলেজের’ ১ লাখ আসনের বিপরীতে।

শিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, সারা দেশে ‘ভালো’ বা ‘মোটামুটি ভালো মানের’ কলেজ আছে ২৪০-২৫০টি। যেগুলোতে সবমিলিয়ে আসন আছে ১ লাখের মতো। ঢাকা শহরে আছে ৩০-৩৫টি নামকরা কলেজ। যেগুলো রয়েছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পছন্দের শীর্ষে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন আছে মাত্র ৩০ হাজারের কিছু বেশি। এই কলেজগুলোতে ভর্তিযুদ্ধ হবে জিপিএ ৫ ধারীদের মধ্যে। অর্থাৎ জিপিএ ৫ পেয়েও ভালো কলেজ পাবে না এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী। অতীতের তথ্য তাই বলছে। গত বছর জিপিএ ৫ পেয়েও ভালো কলেজ তো দূরের কথা, প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। যদিও দ্বিতীয় ধাপে তারা মাঝারি মানের বা দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় গ্রেডের কলেজে ভর্তি হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিপিএ ৫ বা তার কাছাকাছি গ্রেডধারীরা হাতেগোনা কিছু শীর্ষস্থানীয় কলেজে ভর্তি হতে চায়, যেখানে আসন সংখ্যা সীমিত। এ ছাড়া এসব ‘স্বনামধন্য’ কলেজের নিজস্ব শাখার শিক্ষার্থীরা ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়, ফলে বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ কমে যায়। মূলত এ কারণে জিপিএ ৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী কলেজ পায় না। আবার কেউ বা একই কলেজে বারবার আবেদন এবং নম্বর অনুযায়ী কলেজ পছন্দ না দেওয়ায় প্রথম ধাপে ভর্তি থেকে বঞ্চিত হয়।

যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা, সংশোধন হতে পারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা : জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম কলেজ ভর্তি শুরু হতে যাচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কলেজ ভর্তিতে কোটার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। বর্তমানে মেধা কোটায় ৯৩ শতাংশ এবং বাকি ৭ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধীন ২৮টি দপ্তরের জন্য রাখা হয়। চলতি বছর পুরো কোটা বাতিল করার পক্ষে মতামত দেবে শিক্ষা বোর্ড। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর থেকে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংশোধন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহত পরিবারের সন্তান ও ভাইবোনদের জন্য নতুন একটি কোটা যুক্ত করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের এক কলেজ পরিদর্শক কালবেলাকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কলেজ পর্যায়ে ভর্তির বয়স নেই বা এই কোটার প্রাসঙ্গিকতা কমে গেছে। উচ্চ আদালতের সর্বশেষ রায়ে (২০২৪ সাল) মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের কোটা সুবিধা বাতিল হওয়ায় এই কোটার পরিবর্তন জরুরি। যদিও নতুন জুলাই গণঅভ্যুত্থান কোটার শতাংশ হার এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে শিক্ষা বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। এরই মধ্যে স্কুল ভর্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রতিটি শ্রেণিতে একটি করে অতিরিক্ত আসন রেখেছে। কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রেও একই ধরনের ধারা যুক্ত হবে, নাকি সরাসরি কিছু রাখা হবে, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’

নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি নটর ডেম, হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফে: অনলাইনে কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম ২০১৫ সালে শুরু হলেও মিশনারি প্রতিষ্ঠান হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ ও নটর ডেম কলেজ নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। প্রতি বছরের মতো এবারও এই তিন কলেজ নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি করাবে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে প্রতি বছর আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র নির্বাচিত করি। এবারও একই পদ্ধতিতে ভর্তি করানো হবে।’

খুলনা গেজেট/এসএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!