করোণা পরবর্তী লোকসানের ধকল কাটিয়ে উঠতে পরেনি খুলনার ফুল ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গেল বছর লাভের মুখ দেখতে পায়নি সংশ্লিষ্টরা। এখন অস্তিত্বের লড়াইয়ে স্থানীয় ফুল মার্কেট। সারা বছর ধরে আঙুল গুণতে থাকে ভালোবাসা দিবসের জন্য। এবার সে আশার গুড়ে বালি। ফুল মার্কেটে জৌলুস থাকবে না দিনটিতে। কারণ একই দিনে পবিত্র শবে বরাত। যশোরের গদখালীতে ফুলের চাহিদা পাঠায়নি এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ফি বছর এখানকার মার্কেটে কোটি টাকার বাণিজ্য হয় দিনটিতে।
মাঘ মাস চুপিসারে বিদায় নিচ্ছে। প্রকৃতিতে শীতের পরশ নেই। ক’দিন পরে ফাল্গুনের হাওয়া বইবে। ফি বছর প্রথম ফাল্গুনে ভালোবাসা দিবসে সাজ সাজ রব পড়ে নগরীর ফুল মার্কেটে। এবারে সেই জৌলুস থাকবে না। খুবি ক্যাম্পাস, কুয়েট ক্যাম্পাস, বিএল কলেজ, ময়ুর নদের পাড়, পীর খানজাহান আলী (রঃ) সেতু ও প্রেম কানন জুড়ে আবেগ-আমেজ-আয়োজন থাকে। ভাগ্য রজনীর কারণে ভালোবাসা দিবসের সকল আবেগ ম্লান হবে। উপহারের এ উৎসটি খুজেঁ পাওয়া কষ্টসাধ্য হবে। শবে বরাতের দিনে তরুণ-তরুণীরা ফুল কিনতে আগ্রহ দেখাবে না। সে কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না ।
ফারাজী পাড়াস্থ ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ফেব্রুয়ারিতে আরও আটটি দিনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রোজ ডে, ৮ ফেব্রুয়ারি প্রপোজডো, ৯ ফেব্রুয়ারি চকলেট ডে, ১০ ফেব্রুয়ারি টেডি ডে, ১১ ফেব্রুয়ারি প্রমিজ ডে, ১২ ফেব্রুয়ারি হাগ ডে, ১৩ ফেব্রুয়ারি কিস ডে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস। বাণিজ্য হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি, হিন্দু সম্পদায়ের বিয়ের লগ্নকে সামনে। এ দিনে গাড়ি সাজানো, বিয়ের আসর সাজানো, মন্ত্রপাঠ, বাসর ঘর ও বাসি বিয়ের জন্য নানা রংয়ের, নানা নামের ও নানা প্রকারের ফুলের প্রয়োজন হবে। এ মহেন্দ্রক্ষণের জন্য মার্কেটের নাইট কুইন, রোজ কন্যা, অর্কিড গ্যালারী, স্বপ্নের ঠিকানা, জুঁই চামেলী গার্ডেন, বিসমিল্লাহ ফুল ঘর, ফুলের বাসর, ফুলের মেলা, বিয়ের ফুল, বেলী গার্ডেন, পুষ্প মালা, রজনীগন্ধা, ফুলেশ্বরী ও ভ্যালেন্টাইন নামক দোকানের মালিকরা নানা উপকরণ, শ্রমিক নিয়োগ ও বিনিয়োগ করছে। একই প্রস্তুতি নিউমার্কেট, বয়রা মোড়, খালিশপুর ও দৌলতপুরের ফুল ব্যবসায়ীদের।
ফুলের বাসর নামক দোকানের মালিক সৈয়দ রিয়াজ উদ্দীন লিটন বলেন, হিন্দু সম্পদায়ের বিয়ের লগ্নের দিনে নানা নামের ফুল সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। শুক্রবার রোজ ডে তে সাদা, লাল, হলুদ ও পিংক রংয়ের প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হবে ২০-৫০ টাকা দামে। ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ফুলের চাহিদা দেওয়া হবে, গদখালীতে।
ভ্যালেন্টাইন নামক দোকানের মালিক মো. নাজমূল হুদা বলেন, করণার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারিনি। রাজনৈতিক অস্থিরতার ব্যবসায় মন্দাভাব ছিল। পট পরিবর্তনের পর সরকারি পর্যায়ে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। ফুলের চাহিদাও নেই। দোকানের কর্মচারিদের দৈনন্দিন পারিশ্রমিক দেওয়া কষ্টসাধ্য। ফুলের দাম বেড়েছে, কর্মচারির পারিশ্রমিক, দোকান ভাড়া, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি ও কেসিসি’র ট্রেড লাইসেন্সের ফিস বেড়েছে। ফুল ব্যবসা এখন অস্তিত্বের সংকটে । এবারের বড় ভরসা বিয়ের লগ্ন ও শহীদ দিবসের ওপর। ভালোবাসা দিবসে খুশির খবর মিলবে না। এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেছেন।
খুলনা গেজেট/এএজে