খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ আষাঢ়, ১৪৩১ | ৪ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  রংপুরে মিঠাপুকুরে সেপটিক ট্যাংকে পড়ে ৩ জনের মৃত্যু
  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের বৈঠক আজ

ভারী বৃ্ষ্টিতে সিলেট সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা

গেজেট ডেস্ক

ভারতের মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে আবারও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। রোববার রাত থেকে দ্রুত বাড়তে থাকা ঢলের পানিতে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও যাদুকাটা নদী গতকাল সোমবার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে তলিয়ে গেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অনেক নিচু এলাকা। এদিকে মাঝ আষাঢ়ে যে বর্ষণ চলছে, তা সপ্তাহজুড়ে চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর তাতে নদীর পানি বেড়ে দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, একদিনে মেঘালয় রাজ্যের মৌসিনরামে ৪৪৭ মিলিমিটার ও চেরাপুঞ্জিতে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌসিনরাম বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার উত্তরে এবং চেরাপুঞ্জি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উজানে অবস্থিত হওয়ায় এসব এলাকার অতিবৃষ্টির পানি দ্রুতই সুনামগঞ্জ ও সিলেটে প্রবেশ করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে সর্বোচ্চ ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

সিলেটের তিন উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুরে আবারও অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে রোববার পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক উঠেছে। গোয়াইনঘাটের জাফলং ব্যবসায়ী জাকির আহমদ বলেন, জাফলংয়ের ডাউকি নদীর পানি অনেক কম ছিল। ওপর থেকে প্রবল বেগে পানি আসছে। আমরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।

প্রথম দফার বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বন্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ফলে দুদিন ধরে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়কের শক্তিয়ারখলা বাজারের পশ্চিম অংশের ডুবন্ত সড়ক পাহাড়ি ঢলের তোড়ে যে কোনো সময় ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। লালপুর সড়কও ৩ ফুট পানির নিচে পড়েছে।

তাহিরপুরের ব্রাহ্মণগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বড়দল উচ্চ বিদ্যালয়, মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, কলাগাঁও চারাগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাতারগাঁও, রসুলপুর, বালিজুড়ি নতুন হাটি, লক্ষ্মীপুর, আনন্দনগর, আমবাড়ি, সোনাপুর কামনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় পানি উঠেছে। পানির নিচে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি-কলাগাঁও চারাগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় রাস্তা, সোনাপুর-লামাকাটা রাস্তা।

পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের খাকগড়া চৌরাস্তা এলাকায় সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে অন্তত ১৫টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ।

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ভোরে সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে দুপুর ৩টায় সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে ৯৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুপুর ১২টার পর সিলেটের একটি পয়েন্টে কুশিয়ারা ও একটি পয়েন্টে সারি নদী বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বিকেল ৩টায় কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জের অমলসীদে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে ছিল, যা আরও বেড়ে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে সারি নদী জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাটে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদী সুনামগঞ্জ জেলায় দুপুর ১২টার সময় ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে যাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যার মধ্যমেয়াদি পূর্বাভাস সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী সাত দিন মাঝারি থেকে ভারি বা অতি ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে এ সময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমতল বাড়তে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জে সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন সুরমা, সারিগোয়াইন নদীর পানি সমতল দ্রুত বাড়বে। এর ফলে জুলাইয়ের শুরুর দিকে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কা রয়েছে।

সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে নদীগুলোর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদনদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। তবে আগামী ৭২ ঘণ্টায় এসব নদনদীর পানি সমতল বাড়বে। আগামী কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদনদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়বে।

এ ছাড়া দেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য জেলাগুলোর নদনদীর পানি সমতলে স্বাভাবিক প্রবাহে বিরাজমান আছে। আগামী কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাতের প্রভাবে এসব এলাকার নদনদীর পানিও সমতল সময় বিশেষ দ্রুত বাড়বে বলে জানিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।

এ ছাড়া উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি গঙ্গা-পদ্মা নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে, যা আগামী চার দিন বাড়তে পারে। তবে এসব অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা কম বলে জানান পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এর প্রভাবে সপ্তাহজুড়ে দেশের সব বিভাগের কিছু-কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আর কিছু কিছু জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, দেশের প্রায় সব বিভাগেই কমপক্ষে ৫ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, জুলাইতে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, এর মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে তিন থেকে চার দিন বিজলিসহ মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। দেশে পাঁচ থেকে ছয় দিন বিজলিসহ হালকা বজ্রঝড় হতে পারে। জুলাই মাসে এক থেকে দুটি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!