করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত দিশেহারা গোটা ভারত। দেশটিতে এই প্রথমবার দৈনিক মৃত্যু পেরিয়েছে এক হাজার ৭০০। সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এ খবর জানিয়েছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত রোববার সে দেশে প্রতি ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছে ১০ হাজার ৮৯৫ জন এবং ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রতি ঘণ্টায়। গত সোমবার সে সংখ্যাটা বেড়ে ঘণ্টায় সংক্রমণ ও মৃত্যু যথাক্রমে ১১ হাজার ৪০৮ ও ৬৭। গতকাল অবশ্য সংক্রমণ সামান্য কমলেও (ঘণ্টায় ১০ হাজার ৭৯৮) ঘণ্টা পিছু মৃত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩। গতকাল অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও ২০ লাখের গণ্ডি পেরিয়েছে। এর মধ্যে ৬২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশই পাঁচটি রাজ্যে—মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, ছত্তিসগড় ও কেরালা। দৈনিক সংক্রমণের মতোই দৈনিক মৃত্যুর তালিকাতেও শীর্ষে মহারাষ্ট্র। তবে, দৈনিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে দিল্লি থাকলেও দৈনিক সংক্রমণে মহারাষ্ট্রের পেছনেই উত্তরপ্রদেশ।
দিল্লিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই গতকাল করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতার। তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। তবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিভৃতবাসে থাকছেন কেজরিওয়ালও। আম আদমি পার্টির নেতা দুর্গেশ পাঠক জানিয়েছেন, আইসোলেশনেও গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন কেজরিওয়াল। তবে মনিশ সিসৌদিয়া ও সত্যেন্দ্র জৈনের দল সক্রিয়ভাবে কাজ চালাবেন।
দিল্লির পর এবার লকডাউনের পথে হাঁটল ঝাড়খণ্ড। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন গতকাল ঘোষণা করেছেন, ২২ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন জারি করা হচ্ছে রাজ্যে। মহারাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ টোপে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে আজ সিদ্ধান্ত নেবেন, রাজ্যে লকডাউন কার্যকর করা হবে কি না। কেরালায় গতকাল থেকেই বলবৎ হচ্ছে দু’সপ্তাহব্যাপী নৈশ কারফিউ। কর্ণাটকেও গতকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। রাজস্থানেও আজ থেকে শুরু হচ্ছে নৈশ কারফিউ।
দিল্লি ও মুম্বাইয়ের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রবল অক্সিজেন সংকটের কথা জানিয়েছে। হাসপাতালগুলোর বক্তব্য, অবস্থা এমন যে, আর তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই অক্সিজেনের যোগান শেষ হয়ে যাবে। তখন আর কিছু করার থাকবে না। পুনের একটি হাসপাতালে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ায় অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয় রোগীদের।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে টিকাকরণের হার বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে ভারত সরকার। তাই প্রতিষেধকের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। রেমডেসিভিয়ারসহ কিছু ওষুধের কাঁচামালের আমদানি শুল্কও কমিয়েছে ভারত সরকার।
এ দিকে গুজরাটের বিজয় রুপানি সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ এরই মধ্যে উঠেছে। এবার অভিযোগ উঠল, তথ্য গোপনের হাতিয়ার হিসেবে কোভিডে মৃতদের অসুস্থ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাকেনা পাওয়েলা নামের এক ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁর আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে, অসুস্থতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুজরাটের এলিসব্রিজ শ্মশানের এক কর্মী জানিয়েছেন, মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনাভাইরাস যাতে লেখা না হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের ডেপুটি কমিশনার। একই নির্দেশ গেছে আরও কয়েকটি শ্মশানেও। আমদাবাদ পৌরসভার এক কর্মকর্তা অবশ্য এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানিয়েছেন, শ্মশানের তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা তেমন শিক্ষিত নয়। তাই ভুল এড়াতেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে অসুস্থতা লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাওয়েলা অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমের কাছে তথ্য গোপন করতেই এই পন্থা নিয়েছে সরকার।
গতকাল গুজরাট হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সব মিলিয়ে ৭৯ হাজার ৯৪৪টি শয্যা রয়েছে হাসপাতালে। তার মধ্যে ৫৫ হাজার ৭৮৩টি শয্যা ভর্তি। সরকারের সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল হাইকোর্ট সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, বাকি শয্যাগুলো যদি খালিই থাকে, তা হলে সংক্রমিতদের হাসপাতালে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে কেন? এর উত্তরে রাজ্য জানিয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালে ভর্তির জন্য চেষ্টা করছে বহু মানুষ। সে কারণেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবী জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জোগান রয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহের নজরদারির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ কর্মসূচির (পিএমজিকেপি) আওতায় করোনা যোদ্ধাদের বিমা বন্ধ করার ভারত সরকারের সিদ্ধান্তে গতকাল অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রবীণ আইনজীবী পার্সি কাবিনা। তাঁর বক্তব্য, পিএমজিকেপির আওতায় মাত্র ২৮৭ জনের বিমার দাবি কেন্দ্র সরকার মঞ্জুর করেছে। এর পরই বিস্মিত কাবিনার বলেন, ‘গোটা দেশে মাত্র ২৮৭ জন!’ এই প্রকল্প কেন বন্ধ করা হল, সে প্রশ্নও তুলেছেন কাবিনা।
মধ্যপ্রদেশেও করোনার সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তৈরি হয়েছে অক্সিজেন সংকট। পরিস্থিতি সামলাতে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। বিজেপি সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কোভিড রোগীদের বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ শুরু করছেন। কংগ্রেস সাংসদ বিবেক তঙ্খাও ৩৪ টন তরল অক্সিজেন পাঠিয়েছেন জবলপুরে।
খুলনা গেজেট/এনএম