খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ভারতে পালানোর ১০০ দিন : হাসিনাকে তৃতীয় দেশের খোঁজ দিতে পারেনি দিল্লি

গেজেট ডেস্ক

গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন ভারত তাঁকে সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার কথা বলেছিল। তবে সেখানে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার ১০০ দিন পার হলেও এখনও তৃতীয় দেশে স্থায়ীভাবে অবস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি দিল্লি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ইতি টানতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। গত ৬ আগস্ট শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, “বাংলাদেশের নিরাপত্তাবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। খুব কম সময়ের নোটিশে তিনি (শেখ হাসিনা) সাময়িকভাবে ভারতে আসার অনুমতি চান। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘ফ্লাইট ক্লিয়ারেন্সের’ জন্যও অনুরোধ আসে আমাদের কাছে।” এমন পরিস্থিতিতে তিনি (শেখ হাসিনা) দিল্লি পৌঁছেন।

শেখ হাসিনা দিল্লির কাছে সাময়িক সময়ের জন্য আশ্রয়ের অনুমতি চাইলেও দেশটিতে তাঁর অবস্থান দীর্ঘ হয়েছে। ভারতের নামকরা কূটনীতিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তদবির করলেও, গত ১০০ দিনেও তাতে সফল হয়ে উঠতে পারেননি।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কূটনীতির শক্তি নির্ভর করে একটি দেশ সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী। যে দেশ এ দুটি দিকে শক্তিশালী সে দেশের কূটনীতিকরাও বিশ্বে ততটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বা বহুপক্ষীয় ফোরামগুলোতে নিজেদের কাজ উদ্ধার করে আনতে পারেন। তিনি বলেন, কূটনীতিতে বিশ্বজুড়ে ভারতের বেশ সুনাম রয়েছে। তবে শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারতীয় কূটনীতিকদের শক্তি ও প্রভাবের একটা চিত্র পাওয়া গেছে।

কর্তৃত্ববাদী শাসনের কারণে শেখ হাসিনা থেকে আগেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পশ্চিমা দুনিয়া। তাঁর পছন্দের পশ্চিমা দেশগুলো তাঁকে আশ্রয় দিতে চাচ্ছে না। শেখ হাসিনাকে সুরক্ষা দেওয়া ভারতের মর্যাদার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, শেখ হাসিনা ক্ষমতার পুরোটা সময় দিল্লি থেকে সমর্থন পেয়ে এসেছেন। এখন শেখ হাসিনার বিপদে দিল্লি যদি নৈতিকতার প্রশ্নে তাঁর হাত ছেড়ে দেয়, তবে অঞ্চলের বাকি মিত্ররা কখনোই আর ভারতের ওপর ভরসা করবে না। ফলে নৈতিকতার দিকটা ছাড় দিয়েও শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে আগলে রাখছে দেশটি।

এদিকে ভারত-বাংলাদেশ উভয়ই চাইছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়মিত করতে। এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার যে বৈঠকগুলো স্থগিত হয়ে রয়েছে, তা আবারও নিয়মিত ধারায় নিয়ে আসার বিষয়ে একমত দুই পক্ষই।

তবে দুই দেশের সম্পর্কে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন শেখ হাসিনা। ঢাকা খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, ভারতে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য বা বিবৃতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য সহায়ক হবে না। এদিকে প্রায় সময়ই বাংলাদেশ নিয়ে নেতাকর্মীর সঙ্গে দিকনির্দেশনামূলক কথোপকথন ফাঁস হচ্ছে শেখ হাসিনার; যা বাংলাদেশ মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না। প্রতিবেশীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেয়ে শেখ হাসিনা দিল্লির কাছে মুখ্য– ভারতের থেকে এমন বার্তাই পাচ্ছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন ভারতও। বিশ্ববাসী জানে, বাংলাদেশে হাজারো নিরস্ত্র মানুষ হত্যার হুকুমদাতাকে আশ্রয় দিয়েছে ভারত। ৫ আগস্টের পর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোতে বা বহুপক্ষীয় বৈঠকের ফাঁকে চায়ের আড্ডায় প্রায়ই শেখ হাসিনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় ভারতীয় কূটনীতিকদের, যা তাদের জন্য বিব্রতকর। ফলে শেখ হাসিনা কী হিসেবে দেশটিতে অবস্থান করছেন, তা এখনও পরিষ্কার করেনি দিল্লি।

বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে স্থায়ীভাবে ভারতেই থাকতে হবে শেখ হাসিনাকে। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দিল্লি থেকে যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, বেলারুশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) বেশ কয়েকটি দেশে শেখ হাসিনাকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা চালিয়েছিল দিল্লি। ভারতের চাওয়া ছিল রাশিয়ার আশপাশের দেশগুলোতে শেখ হাসিনার চূড়ান্ত গন্তব্য নিশ্চিত করতে। কারণ, এমন দেশে দিল্লি শেখ হাসিনাকে পাঠাতে চায়, যে দেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) খুব একটা তোয়াক্কা করে না। তবে এখনও তার কোনো ফল আসেনি।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, দেশটির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকসহ তাদের পরিবারের বসবাস। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির স্ত্রী পেপে সিদ্দিক ফিনল্যান্ডের নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় থাকেন। আর ভারতে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আঞ্চলিক কার্যালয়ে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আঞ্চলিক পরিচালক পদে রয়েছেন।

সূত্র : সমকাল

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!