খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ মাঘ, ১৪৩১ | ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা
  যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ৬ আরোহি নিয়ে বিমান বিধ্বস্ত, হতাহতের শঙ্কা

সীমান্তে আরেক যুবক খুন, স্কুলছাত্রের মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ (ভিডিও)

গেজেট ডেস্ক

নওগাঁ জেলা থেকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে এসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে খুন হয়েছেন তুষার খাঁ (৩৫) নামের এক যুবক। কিন্তু কারা সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছে তাকে হত্যা করে ভারত অংশে মরদেহ ফেলে যায় এ নিয়ে বিজিবি ও পুলিশ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার পতাকা বৈঠক শেষে বিজিবি সন্ধ্যায় তুষারের মরদেহ পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে।

আজ শুক্রবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতের ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত তুষার নওগাঁ জেলার রানী নগর বালুভরা গ্রামের এলাকার মোসলেম খাঁর ছেলে।

সীমান্তের বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ ও বিজিবি জানায়, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী নারায়ণপুর ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাই জেলার করমচুরা থানার রহিমপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার গুরুতর আহত অবস্থায় তুষার নামের এক বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রথম দিকে তার পরিচয় ও কোন দেশের বাসিন্দা এ নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফ তর্কে জড়িয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, সময় মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় সবার চোখের সামনেই তুষার মারা যান। পরে পতাকা বৈঠক চলাকালে তুষারের স্বজনরা পরিচয় নিশ্চিত করার পরই বিজিবি সদস্যরা মরদেহ গ্রহণ করে পুলিশে হস্তান্তর করে।

তুষারের ফুফু আসমা বেগম জানান, তুষার তার অসুস্থ ফুফা আবু তাহেরকে দেখতে নওগাঁ থেকে ব্রাহ্মণপাড়ায় আসে। কিন্তু কারা এবং কেন তাকে হত্যা করল তা বের করতে তিনি পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

বিজিবি শশীদল বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল খালেক জানান, আন্তর্জাতিক সীমানায় পতাকা বৈঠক করেও আমরা তুষারের পরিচয় নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নিশ্চিত সিদ্ধান্তে যেতে পারিনি। তবে এক পর্যায়ে ওই যুবকের ফুফু আসমা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করেন। ততক্ষণে ওই যুবক মারা যান। পরে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে পুলিশের নিকট মরদেহ হস্তান্তর করি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, আমরা মরদেহ গ্রহণ করার পর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। মরদেহের সুরতহালে তুষারের শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি। স্বজনরা দাফনের জন্য মরদেহ নওগাঁয় নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রেশমা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

স্কুলছাত্রের মরদেহ ফেরত দেয়নি বিএসএফ

এদিকে দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে স্কুলছাত্র মিনার বাবু হত্যার ৪২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি।

হত্যার ঘটনার ৪০ ঘণ্টা পর বিজিবির পক্ষ থেকে ডাকা হলে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সদরের ৯নং আস্করপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক, সংরক্ষিত নারী সদস্য রুমানা পারভীন, নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলম, নিহতের চাচাতো ভাই রুবেল হাসানসহ কয়েকজন বিজিবির খানপুর সীমান্ত ফাঁড়িতে যান। সেখানে তারা নিহতের ছবি, শরীরের চিহ্নসহ নানা তথ্য প্রদান করেন। সেসব বিএসএফর কাছে হস্তান্তর করবে বিজিবি। মেইলের মাধ্যমে বিএসএফকে সেগুলো দিয়ে সংবাদ পাঠানো হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছে।

বিজিবি ফাঁড়ি থেকে বের হয়ে রুমানা পারভীন ও রুবেল হাসান জানান, বিজিবি ছবিসহ যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তা বিএসএফ-এর কাছে মেইল করে পাঠিয়েছে। এরপর বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে জানানো হবে কখন এবং কোথায় নিহতের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে নিহত হওয়ার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও মরদেহ ফিরে না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। ছেলের শোকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন মা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিনারের মায়ের আগে থেকেই অ্যাজমা রয়েছে। ছেলের শোকের কারণে অ্যাজমা বেড়ে গেছে। আর পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন বাবাও। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও মরদেহ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী এবং স্বজনেরা।

নিহতের একমাত্র বোন জান্নাতুল পারভীন বলেন, আমার ভাইকে বিএসএফ হত্যা করেছে। আমরা মরদেহ চাই। আমরা ভালোভাবে কাফন-দাফন করতে পারি যেন। আমার ভাইকে হত্যার বিচার চাই।

নিহতের মা মিনারা পারভীন বলেন, আমার বুক খালি করা হয়েছে। এই গুলির অর্ডার কে দিয়েছে? এই বর্ডার দিয়ে কেন ভারতের মাল পার হয়? ওদের মাল কেন বাংলাদেশে আসে? এইজন্য এই বাচ্চাগুলো মারা যায়। কারও মায়ের বুক যেন খালি না হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আমার দাবি।

মিনারের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ছেলেটার মরদেহ ফেরত চাই। আমি মাটি দিবো।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে জেলার সদর উপজেলার দাইনুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনার বাবু (১৬) নামে এক বাংলাদেশি স্কুলছাত্র নিহত হয়। সে সদর উপজেলার ৯নং আস্করপুর ইউনিয়নের ভিতরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করত। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও একজন। এছাড়া অন্য একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!