খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কয়েকজন বিচারপতির আচরণের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে, এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে : সুপ্রিম কোর্ট
  সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক বিকালে
  ১৫ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট জয় বাংলাদেশের

ভারতীয় উগ্রবাদীদের বাঁধা, কয়েকটি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশে পটপরিবর্তনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে চলছে টানাপোড়েন। চলছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। কিন্তু এর সঙ্গে ধীরে ধীরে জড়িয়ে যাচ্ছে বাণিজ্যিক আদান-প্রদানও। ভারত সরকার সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। উগ্রপন্থীরা আবার কোথাও কোথাও বিক্ষোভ করে বন্ধ করে দিচ্ছে স্থলবন্দরের কার্যক্রম। এতে ব্যাহত হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (বিএলপিএ) তথ্য অনুসারে, দেশে ২৪টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে বেনাপোল, ভোমরা, বুড়িমারী, তামাবিল, সোনাহাট, আখাউড়া, নাকুগাঁও, বিলোনিয়া, গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী, শেওলা, ধানুয়া কামালপুর, সোনামসজিদ, হিলি, বাংলাবান্ধা, বিবিরবাজার ও টেকনাফ চালু রয়েছে। তথ্যমতে, এসব স্থলবন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২ কোটি টন পণ্য আমদানি হয় বাংলাদেশে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে।

এসব স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে প্রধানত যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য, সুতা, তুলা ও রাসায়নিক পণ্য। এ ছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, আলু ও হলুদের মতো পণ্যও ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

স্থলবন্দরের কার্যক্রমে বাধা

ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর কয়লা-পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল দিয়ে কমেছে যাত্রী পারাপার। দুই দেশের সীমান্তে চলছে কড়াকড়ি। যে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে এখন আমদানি-রপ্তানি চলছে, তা-ও কয়েক দিন আগের তুলনায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে। গত সোমবার ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের লোকজনের বাধা ও পণ্য পরিবহন জটিলতায় সিলেটের স্থল ও শুল্কস্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোলে গত সোমবার বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বক্তৃতায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী হুমকি দেন, বাংলাদেশে ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি না দিলে এ মাসে পাঁচ দিন বেনাপোল দিয়ে আলু-পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখবেন। তাতেও কাজ না হলে জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি অচল করে দেবেন পেট্রাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি।

সিলেটের বিয়ানীবাজারের শেওলা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ ইমরান মাতব্বর বলেন, ‘শুনেছি, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট/কাস্টমসকে জানিয়েছেন, তাঁরা আমদানি-রপ্তানি করবেন না। তবে সরকারিভাবে কোনো আদেশ পাইনি।’

সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. তাসনিমুর রহমান বলেন, ‘সব স্থল ও শুল্কস্টেশনে অফিস খোলা রয়েছে। তবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি না হওয়ায় কার্যক্রম হচ্ছে না।’

হিলি ল্যান্ড পোর্ট আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনলাইনে স্লট বুকিং বন্ধ করে দেওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি বন্ধ রয়েছে। যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তার কারণে বন্দর দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত না হয়, সেটি উভয় দেশের ব্যবসায়ীদেরই চাওয়া।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় আঘাত আসে বাণিজ্যে। বাণিজ্যে বাধা এলে কার লাভ কার ক্ষতি সেটি স্পষ্ট হবে বছর শেষে মূল্যায়নে। কিন্তু বাংলাদেশ যেহেতু আমদানিমুখী, তাই কোনো একটি দেশের ওপর বেশি নির্ভরশীল না হয়ে সময় থাকতেই বিকল্প উৎস খুঁজে দেখতে হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংগত কারণে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটেছে। কারণ, ভারত সরকার গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, একই সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিষয়গুলোও বোঝাপড়া করেছে। সেখানে এ দেশের জনগণ বা ভিন্ন কোনো মতাদর্শকে তারা গুরুত্ব দেয়নি। এখন যেহেতু সেই দলটি নেই, তাই ভারতও এখন স্বস্তিতে নেই। তারা আবারও চায়, তাদের পছন্দের দলটি বাংলাদেশে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হোক, ক্ষমতায় আসুক। আজকের যে প্রেক্ষাপট উদ্ভূত হয়েছে, চতুর্মুখী এই চাপ তাদের পরিকল্পিত চাওয়ার ফলাফল বলেই মনে হচ্ছে, যার খেসারত বাণিজ্যের ওপরও পড়েছে। এটি কোনোভাবেই শিষ্টাচারমূলক কূটনীতি নয়।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!