ভারতীয় পণ্য বর্জন ও ভারতবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে কৌশল ঠিক করছে বিএনপি। এ নিয়ে গত সোমবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আরও আলোচনা ও বিশ্লেষণের পর এ বিষয়ে দলের অবস্থান ঠিক করবে বিএনপি। ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনে কৌশলের অংশ হিসেবে দলগতভাবে সরাসরি অংশ নিতে চান না তারা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নেওয়া সবাই বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভারতের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন। তবে পার্শ্ববর্তী ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র হওয়ায় কৌশলগত কারণে তারা ভারতের পণ্য বর্জনের আন্দোলনে দলগতভাবে সরাসরি অংশ নিতে চান না। অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো গোষ্ঠী কিংবা জনগণ যদি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেয়, তাহলে বিএনপি সেটি এড়িয়ে যাবে না। তাই এ ক্ষেত্রে বিএনপির কৌশল কী হবে, তা ঠিক করা উচিত বলে জানান তারা।
ভারতীয় পণ্য বর্জনের একটি আন্দোলনের বিষয় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত ২০ মার্চ নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সেই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এরপর একদল কর্মীকে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন। তখন তাঁর সঙ্গে থাকা কর্মীরা সেই চাদর আগুন দিয়ে পোড়ান।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, রিজভীর ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলার ঘটনাটি বিএনপির ভেতরে নানা আলোচনার সৃষ্টি করেছে। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকের আলোচনায়ও বিষয়টি এসেছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে রিজভীর এমন কর্মকাণ্ড শোভনীয় হয়নি বলে মনে করে স্থায়ী কমিটি।
দু’জন সদস্য এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে বলেন, রিজভী ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে কাজটি করেছেন– এমনটা বললেও সেটি ব্যক্তিগত ছিল না। দায়িত্বশীল পদে থাকায় দেশবাসী মনে করে দলের সিদ্ধান্তেই তিনি এমনটা করেছেন। স্থায়ী কমিটির ওই দুই সদস্য আরও বলেন, ‘আমরা ভারতের বিরোধিতা করব, কিন্তু কৌশল ঠিক করতে হবে। সেটা না করে যে যার মতো বক্তব্য দেওয়া উচিত হবে না।’
আলোচনার এ পর্যায়ে সদ্য কারামুক্ত একজন নেতা বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘ আন্দোলন করেছি। সব সময় বড় আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন হয়। সে মূল্যায়ন আমরা করিনি। আমাদের উচিত আগে সেই মূল্যায়ন করা, তারপর এর ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা। আমরা যদি ভারত বিরোধিতা করি, তাহলে তার কৌশল কী হবে– সেটা নির্ধারণ করতে হবে। এটা নিয়ে আগামীতে পরিপূর্ণ আলোচনা হওয়া উচিত।’
তপশিল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বৈঠকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নেতারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের চার মাসের মধ্যে সেই সরকারের অধীনে দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি যেসব কারণে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেগুলো এখনও বিদ্যমান রয়েছে। তবে দলের কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁর বিরুদ্ধে বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিপক্ষে মত দেন স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। তবে তাঁর ওই বক্তব্যে অনেকেই সায় দেননি। সে ক্ষেত্রে এই সরকারের অধীনে আর কেনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
খুলনা গেজেট/কেডি